বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশে যেতে আগামী পাঁচ বছরে দেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এরই অংশবিশেষ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০ পর্যন্ত) বাংলাদেশে বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে। এর পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে। যদিও এদেশ ১৯৭৩ সালে এডিবির সদস্য হওয়ার পর গত ৪২ বছরে ১ হাজার ৫৫০ কোটি (সাড়ে ১৫ বিলিয়ন) ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে।
সূত্র মতে, মধ্য আয়ের দেশে যেতে ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে দেশে অনেক বিনিয়োগ দরকার। তাই কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজির আওতায় ৮০ কোটি টাকার সহায়তা দেবে এডিবি। এ বিষয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের-ইআরডি সঙ্গে বৈঠকে বসছে এ সংস্থাটি। প্রতিবছর ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১৬ হাজার কোটি টাকা করে এই অর্থ পাওয়া যাবে। গত ৫ বছরের তুলনায় আগামী ৫ বছরে সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন কৌশলপত্রে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা বাড়ানো, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও নীতি সহায়তা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সরকারের সংস্থা ও বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে মূল ধারায় নাগরিকের অংশগ্রহণ বাড়ানোকে গুরুত্ব দেবে সংস্থাটি। এ উদ্দেশ্য অর্জনে প্রয়োজনে অন্য দাতা সংস্থাগুলোকে যুক্ত করতে চায় এডিবি। নতুন কৌশলপত্রে বাংলাদেশের প্রয়োজন বা অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেবে এডিবি। এছাড়া বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেবে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিকল্পনা, পলিসি তৈরি ও ক্রয় প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা আনা।
এডিবি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রতিবছর গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে ২০২০ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যা বর্তমানে জিডিপির ২৯ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তা লাগবে, যা সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। সে অনুযায়ী এডিবি সম্প্রতি এই স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছে। তবে টাকার অঙ্কটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন এডিবির ঢাকা মিশনের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, বিষয়টি শুধু সরকার নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি খাত ও বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
ইআরডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে যেতে চাচ্ছে। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ করতে হবে সরকারকে। এতে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। চাহিদা পূরণে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া এডিবি বাংলাদেশের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়ার সহায়তার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তিনি জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ৫ বছরের অর্থনৈতিক রূপরেখা হিসেবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের ঋণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর আগে ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে এডিবির সহায়তা প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল মোট ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ম মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সহজ শর্তের ঋণ ছিল অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক ছিল কঠিন শর্তের ঋণ। তার আগের পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এডিবি সহায়তা দিয়েছিল মোট ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওসিআর (সহজ শর্তের) ঋণ ছিল ২ বিলিয়ন ও এডিএফ (কিছুটা কঠিন শর্তের) ঋণ ছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সূত্র জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। এশীয় উন্নয়ন তহবিল থেকে রেয়াতি সুবিধায় সর্বাধিক ঋণ গ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবি প্রধানত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, পানিসম্পদ সম্পদ, সুশাসন, স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাত। ইআরডি সূত্র জানায়, এডিবি বাংলাদেশকে দুই ধরনের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:৪০ ৩৭৫ বার পঠিত