.বঙ্গনিউজ ডটকমঃ যুযুধান দুই অধিনায়ক বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই মহানায়ক। এই ম্যাচের প্রোমো বানাতে বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে টাকা দেওয়াটা নেহাতই অপচয় হতো। অপচয়ই তো, যেখানে দুজনের দুটি ছবি বসিয়ে ‘মাশরাফি বিন মুর্তজা বনাম সাকিব আল হাসান’ লিখে দিলেই সুপারহিট!
সুপারহিট, তবে সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া কোথায়! বড় বেশি অনুমিত লাইন। কাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস-রংপুর রাইডার্স প্রথম কোয়ালিফায়ারে অন্তঃসলিলা হয়ে বয়ে যাওয়া ভিন্ন একটা খণ্ডযুদ্ধের স্রোত বরং এর চেয়ে অনেক রোমাঞ্চকর ছিল। সাকিব আল হাসান বনাম আবু হায়দার। বাড়াবাড়ি! মাত্রা ছাড়ানো বাড়াবাড়ি! কার সঙ্গে কার তুলনা! একজন টি-টোয়েন্টির এক নম্বর অলরাউন্ডার। অন্যজনের ক্যারিয়ারে হাঁটি হাঁটি পা পা। এই বিপিএলের আগে আত্মীয়-পরিজন বন্ধুবান্ধবের বাইরে কজনই বা চিনত এই আবু হায়দার রনিকে!
তবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে না তাকিয়ে শুধু এই বিপিএল ভাবলে লড়াই কিন্তু একটা ছিলই। এই ম্যাচের আগে দুজনেরই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট। ম্যাচ শেষে সাকিব সেই ১৭-তেই পড়ে থাকলেন। আবু হায়দারের নামের পাশে ২১!
দেশ থেকে দেশান্তরে রংবাহারি ক্রিকেটের লিগ খেলে সাকিব পরিণত হয়েছেন টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালায়। খেলাটা একরকম মুখস্থই হয়ে গেছে তাঁর। তা মুখস্থ নামতাতেও তো কখনো কখনো ভুল হয়। কাল ছিল সাকিবের এমনই ভুলের দিন। ভুলে যাওয়ারও।
উইকেট মরীচিকা হয়ে থাকল, ৪ ওভারে রান দিলেন ৪২। দুই দল মিলিয়েই সবচেয়ে খরুচে বোলিং। অলরাউন্ডারদের বড় সুবিধা, একটা ভুল আরেকটি ‘ঠিক’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়। কিন্তু এদিন যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের থিম সং—‘ভুল, সবই ভুল…!’ ৪৫ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই পত্রপাঠ বিদায়।
ব্যাটিং-দুরূহ উইকেটে কুমিল্লা ১৬৩ রান তুলে ফেলার পরই আসলে ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল। তা যদি কালিতে লেখা হয়ে থাকে, সাকিব আউট হওয়ার পর তা পাথরে খোদাই হয়ে গেল।
আর আবু হায়দার? তাঁর দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ পড়ল। সেই দুঃখ আয়ু পেল মিনিট খানেক। পরের দুই বলেই যে উইকেট! ডিপ স্কয়ার লেগে শুভাগত অসাধারণ এক ক্যাচে ‘জীবন’ পাওয়া সৌম্যর ‘মৃত্যু’! পরের বলেই স্টাম্প ছত্রখান, বাড়তি পাওনা ভূপাতিত লেন্ডল সিমন্স। এমনই দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কার, যা দেখে থাকলে ওয়াসিম আকরামেরও হাততালি দেওয়ার কথা।
পরের স্পেলের ২ ওভারে ২ উইকেট। শেষটি আরেকটি নিখুঁত ইয়র্কারে। ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট। এই বিপিএল থেকে যদি কোনো প্রাপ্তি থেকে থাকে, তা নেত্রকোনার ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ। বোলিং-উদ্যাপন সবকিছু মিলিয়ে যেন একঝলক তাজা বাতাস।
‘সাকিব বনাম আবু হায়দার’ বলা হয়েছিল না! সেই লড়াইয়ের ফল তো বিস্তারিতই জানলেন। যেটি প্রতীকী হয়ে ম্যাচের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে। যে বিপিএলে আকছার এক শর নিচে স্কোরের দেখা মিলছে, সেখানে এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান কি না ৭২ রান!
কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটিই তো এর চেয়ে ৭ রান বেশি তুলে ফেলেছে। সেই জুটির দুই অংশীদার ইমরুল আর লিটনের ব্যাটিং অবশ্য ভুল বোঝাচ্ছিল, দুজন বুঝি ভিন্ন দুই উইকেটে ব্যাটিং করছেন! লিটন গহিন অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলা এক পথিক আর ইমরুল সুন্দর-সাবলীল। ৪৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়ল সাকিবকে অমন হেলাফেলায় খেলা। ইমরুলের কাছেও সাকিবের ৮ বল থেকে নেওয়া ২০ রানের আলাদা মহিমা থাকার কথা।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ অবশ্য ইমরুল নন, আবু হায়দারও না। যে উইকেটে ১৩৫-৪০-কেই ‘পার স্কোর’ ধরেছিলেন দুই অধিনায়ক, সেখানে কুমিল্লাকে ১৬০ ছাড়িয়ে নেওয়ায় বড় ভূমিকা আসহার জাইদির। মাত্র ১৫ বলে ৪০ করার পর বোলিংয়ে ৪ উইকেট—ম্যাচসেরার নাম ঘোষণার আগে জল্পনার কোনো স্থান ছিল না।
বিপিএলে প্রথম এসেই ফাইনালে। যে কৃতিত্বে জাইদির নাম আসবে, আসবেন ইমরুল-হায়দারও। পশ্চাৎপটে অবশ্য দীর্ঘকায় একটা ছায়া। আধা ফিট হয়ে খেলছেন, কাল ছোট্ট রানআপে বোলিং করেও ৪ ওভারে ১৩ রানে ১ উইকেট। বিপিএলের শুরুতে তেমন পাত্তা না পাওয়া দলটিকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার আসল কৃতিত্বও তাঁর নেতৃত্বগুণের।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস না বলে এই দলকে বলা উচিত ‘মাশরাফি ভিক্টোরিয়ানস’!
কুমিল্লা: ২০ ওভারে ১৬৩/৭
রংপুর: ১৭ ওভারে ৯১
ফল: কুমিল্লা ৭২ রানে জয়ী
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৫:২৫ ২৯৯ বার পঠিত