বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ অধিনায়ক হয়ে যিনি বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে, সেই মাশরাফির নেতৃত্বে বিপিএলে দুর্দান্ত গতিতে ছুটছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসও lশুরুতে একটু ভুল-বোঝাবুঝি ছিল। মনে হচ্ছিল আইকন খেলোয়াড় হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পেয়ে বুঝি খুশি নয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস! একজন অলরাউন্ডারের অভাব নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি চেয়ারম্যান নাফিসা কামালের আফসোসই ছড়িয়েছিল সেই বাতাবরণ। কিন্তু কয়েকটা ম্যাচ যেতে না-যেতেই তা উধাও। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ হয়ে গেলেন কুমিল্লার প্রতীক!
সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর নাফিসা কামালও ভুলে গেছেন অলরাউন্ডারের অভাবের কথা। কাল তো এমনও বললেন, ‘আমাদের জন্য ওপরে আল্লাহ, নিচে মাশরাফি। আমরা আজ যে জায়গায় এসেছি, সেটা সম্পূর্ণ ওনার কৃতিত্বে। অন্য কাউকে অধিনায়ক করলে হয়তো এক শ ভাগ পেতাম। মাশরাফি আমাদের এক শ ভাগেরও বেশি দিচ্ছেন।’
কিন্তু কীভাবে? সর্বশেষ দুই ম্যাচে বোলিং-ব্যাটিং কিছুই করেননি। আগের ছয় ম্যাচেও উইকেট মাত্র ৩টি। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি করে ম্যাচ জেতানো ছাড়া ক্রিকেটার মাশরাফির অবদান কোথায়!
মাশরাফির জাদুটা এখানেই। ব্যাট-বল ড্রেসিংরুমে রেখেও তিনি হতে পারেন দলের প্রাণভোমরা, শুধু অধিনায়ক মাশরাফির উপস্থিতি বদলে দিতে পারে একটা দলের চেহারা। প্লেয়ার্স বাই চয়েসের পর যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে মনে হচ্ছিল সাদামাটা এক দল, মাশরাফি নামক জাদুর কাঠির স্পর্শে সেই কুমিল্লাই এখন তৃতীয় বিপিএলে শিরোপার অন্যতম দাবিদার।
অধিনায়ক মাশরাফিকে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। প্রিমিয়ার লিগে চোট নিয়ে খেলেও দলকে শিরোপা এনে দেওয়ার উদাহরণ আছে তাঁর। জাতীয় দলের জন্যও অধিনায়ক মাশরাফি কত বড় সঞ্জীবনী, এ বছরের সাফল্যের গ্রাফই তা বলে দিচ্ছে।
বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এল প্রসঙ্গটা। কাগজে-কলমের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সঙ্গে মাঠের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পার্থক্যটা আসলে কীভাবে হলো? সাদামাটা দল নিয়েও সবার আগে শেষ চারে উঠে যাওয়ার রহস্যই বা কী? মাশরাফির ভাষায়, ‘টিম ইউনিটি, সবাই পারফর্ম করছে। আমরা মাঠ, মাঠের বাইরে সব জায়গাতেই খুব ভালো করছি। দল নিয়ে চিন্তা না করে যেটা পেয়েছি সেটা নিয়েই সামনে এগিয়েছি।’ তবে স্বীকার করেছেন, শুরুতে কাজটা কঠিনই ছিল। প্রথম ম্যাচের আগে একাদশ সাজাতেও নাকি হিমশিম খেতে হচ্ছিল। সমস্যার সমাধান হলো দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের আসহার জাইদিকে নিয়ে।
মাশরাফি অবশ্য সেটাকেও মনে করছিলেন ‘ঝুঁকি’। জাইদি সম্পর্কে কোনো ধারণাই যে ছিল না! তা ছাড়া বিদেশিদের চেয়ে তাঁর স্থানীয় খেলোয়াড়দের ওপরই বেশি আস্থা। ব্যাখ্যাটাও পরিষ্কার। একাদশে বিদেশি থাকেন চারজন, স্থানীয় ক্রিকেটার সাত। চারজন খেলোয়াড় সাতজনের চেয়ে বেশি নির্ভরতা কীভাবে দেয়! ‘উইকেট আমাদের। আমরাই ভালো জানি এখানে কী করতে হবে। ৭-৪-এ কখনো চারের জেতার কথা নয়। সাতেরই জেতা উচিত।’
বলতে গেলে পুরো ক্যারিয়ারই চোট-আঘাত নিয়ে খেলেছেন। এই বিপিএলেও সেটি মাশরাফির সঙ্গী। চট্টগ্রামে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ার পরের ম্যাচ থেকেই বল হাতে নিচ্ছেন না। মাঠে তাঁর উপস্থিতি অনেকটা ‘নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনে’র মতো। সেটাও নাকি ফ্র্যাঞ্চাইজির চাপে নয়, নিজের ইচ্ছাতে। ‘মাশরাফির ওপর আমাদের দিক থেকে কোনো চাপ নেই। সবকিছু উনি নিজের ইচ্ছাতেই করছেন’-দাবি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস চেয়ারম্যানের। ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ধন্যবাদ দিয়ে মাশরাফিও বললেন, ‘কোনো চাপও নেই। আমি এখন চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারছি। শুধু মাঠে দাঁড়িয়ে দলটাকে দেখি।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একবার চোট নিয়ে খেলেও আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ‘অফ স্পিনার’ মাশরাফি। এবার কি কাজটা তিনি দাঁড়িয়ে থেকেই করতে চাচ্ছেন
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০:০৭ ২৩৬ বার পঠিত