বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃলড়াইটা এক অর্থে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমের মধ্যেই হলো। কখনো তাতে সাকিব জিতলেন, কখনো মুশফিক। তবে স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে সিলেট সুপারস্টারসকে ৬ রানে হারিয়ে শেষ হাসিটা হাসলেন সাকিবই।
থিসারা পেরেরার বলটা মোহাম্মদ মিঠুনের গ্লাভসে যাওয়া মাত্র লং-অন থেকে ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ে এলেন সাকিব। আম্পায়ার তানভীর আহমদের সঙ্গে রীতিমতো বাদানুবাদই হলো রংপুর রাইডার্সের অধিনায়কের। যদিও রিপ্লেতে দেখা গেল, বলটা মুশফিকুর রহিমের ব্যাট ছোঁয়নি।
এমনিতে মাঠে তাঁকে এমন চেহারায় কমই দেখা যায়। সেই সাকিব আজ মেজাজ হারালেন! বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন রংপুর অধিনায়ক। কারণও আছে। প্রতিপক্ষকে ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্যটা যে খুব একটা বড় ছিল না। রংপুরের হয়তো প্রেরণা ছিল বরিশাল। এর আগে সিলেট সুপারস্টারসকে ১০৯ রানের লক্ষ্য দিয়েও জিতেছিল বরিশাল বুলস। অবশ্য ওই ম্যাচটা ছিল রাতে। উইকেটের যে চরিত্র, রাতের উইকেটে ১০৯ রানও ‘বিরাট’ লক্ষ্য। কিন্তু দিনের ম্যাচে রংপুরের ১১০ রান কতটা ‘নিরাপদ’, সংশয় থেকেই গিয়েছিল।
সাকিব, সচিত্র সেনানায়েকে, পেরেরার দারুণ বোলিংয়ে এ লক্ষ্যটা পেরোতেই পারল না সিলেট। গত দুই ম্যাচের ব্যর্থতা কাটিয়ে খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন মুমিনুল হক। থিসারা পেরেরার বলে এলবিডব্লু হওয়ার আগে খেললেন ২৩ বলে ২৯।
সিলেটের আশার বাতি আসলে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মুশফিক। এক প্রান্ত আগলে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। ২৫ রানে অপরাজিত থেকে সিলেট অধিনায়ক সইতে হলো আবারও পরাজয়ের জ্বালা।
ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে আবারও সফল সাকিব। নিয়েছেন ৩১ রানে ৩ উইকেট। মাঠে যেমন সাকিবকে মেজাজ হারাতে দেখা গেল, আবার জয়ের আনন্দে নাচতেও দেখা গেল!
বিপিএলে প্রতিদিন প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে উইকেট যেখানে দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাটসম্যানের দিকে। আজ বিপরীত চিত্র। উইকেট হয়ে গেছে বোলিং-বান্ধব! রংপুর নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে করল ১০৯। গত চার দিনের তুলনায় প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে এটিই সর্বনিম্ন।
অবশ্য শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন রংপুরের দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স-সৌম্য সরকার। প্রথম ২ ওভারে হলো ১৭ রান। এর পরই রংপুরের রানরেটের গ্রাফটা যেন গোত্তা খাওয়া ঘুড়ি! সৌম্যের রানখরা অব্যাহত থাকল এ ম্যাচেও। মোহাম্মদ শহীদের বলে ফিরলেন মাত্র ৭ রানে।
টি-টোয়েন্টিতে প্রতিটি ডট বলই মূল্যবান। একেকটা ডট বল মানে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়া। আর যত চাপ বাড়বে, ততই ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এ কাজটা ঠিকভাবেই করেছেন সিলেটের বোলাররা। রংপুরের ইনিংসে ডট বলই ছিল ৬২টি!
রংপুরের ব্যাটসম্যানরা কতটা চাপে ছিল এক সাকিবের ইনিংসেই পরিষ্কার। ৩৭ বলে করেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩। রংপুর অধিনায়কের স্ট্রাইকরেট অবাকই করবে, ৮৯.১২। বাউন্ডারি থেকে সাকিবের রান ১৪। ৪২ শতাংশ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে।
সাকিবের ইনিংসটা যেন রংপুরের প্রতীকী। ধীর গতিতে চলা ইনিংসের ৪২ শতাংশ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে। রংপুরকে চাপে রাখার আসল কাজটা করেছিলেন রবি বোপারা। সিলেটের এ মিডিয়াম পেসার ৪ ওভারে মাত্র ৮ রানে শ্লথ করে দিয়েছিলেন রংপুরের ইনিংস চাকা। সেটি কাজে লাগিয়ে স্লগ ওভারে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ শহীদ। ৪ ওভারে ১২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে করেছিলেন বিপিএলে নিজের সেরা বোলিংটাই। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিলেটের বোলারদের সাফল্য শেষ অবধি ম্লানই হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১০৯/৯ (সিমন্স ১৩, সৌম্য ৭, সাকিব ৩৩, মিঠুন ৪, জহুরুল ৮, পেরেরা ২১, স্যামি ৫, সেনানায়েকে ৭, আরাফাত সানি ৩, সাকলাইন ০*, জায়েদ ০*; শহীদ ৪/১২, মেন্ডিস ০/৪১, মুনাবীরা ০/১৯, নাসুম ১/১৫, বোপারা ১/৮, নাজমুল অপু ১/১১)
সিলেট সুপারস্টারস: ১৯.২ ওভারে ১০৩ (মুনাবীরা ১৭, কব ০, মুমিনুল ২৯, মুশফিকুর ২৫*, নাজমুল অপু ০, বোপারা ১, নাসুম ৭, নাজমুল ৫, নুরুল ৯, শহীদ ৪, মেন্ডিস ৩; সাকিব ৩/৩১, সানি ১/২৭, সেনানায়েকে ১/১৫, পেরেরা ১/১১, সাকলাইন ০/৬, জায়েদ ২/৫, স্যামি ১/৭)।
ফল: রংপুর ৬ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২০:৩৩ ৪৪৩ বার পঠিত