শেষ বলে ১ রান নিয়ে রংপুরকে স্মরণীয় এক জয় এনে দিলেন সাকলাইন। বাঁহাতি স্পিনারের বাঁধভাঙা উদ্যাপনে সঙ্গী দুই সতীর্থ সৌম্য ও মিসবাহ l প্রথম আলোবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃমিসবাহ-উল-হকের কথার পর ম্যাচের পুরো বর্ণনা না দিলেও চলে। ‘এককথায় অসাধারণ এক ম্যাচ। শেষ ওভার পর্যন্ত কেউ জানে না ম্যাচে ফলাফল হবে নাকি সুপার ওভারে যাবে। সবাই দারুণ উপভোগ করেছে।’ ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে কথাটা বলার সময় গম্ভীর মিসবাহর মুখেও থাকল স্মিত হাসি।
শেষ বলের রোমাঞ্চ রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনাই ছড়িয়ে দিয়েছিল তৃতীয় বিপিএলের প্রথম ম্যাচ। চিটাগং ভাইকিংসের পেসার শফিউলের করা শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৪ রান দরকার ছিল রংপুর রাইডার্সের। লং অফ দিয়ে দ্বিতীয় বলেই ড্যারেন স্যামির ছক্কা। পরের বলে ২ রান নিয়ে চতুর্থ বলে বাউন্ডারি। পঞ্চম বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্যামি রানআউট হয়ে গেলেও দলকে নিরাশ করেননি ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান সাকলাইন সজীব। শেষ বলে দরকার ১। শফিউলের বলটা মিড অফে পাঠিয়েই আরাফাত সানির সঙ্গে প্রান্তবদল। উৎসবের স্রোত নামল রংপুর রাইডার্সের ড্রেসিংরুম থেকে।
অথচ ম্যাচের শুরুটা যে রকম ছিল, মনে হচ্ছিল তামিম ইকবালের চিটাগং ভাইকিংস শুভসূচনাই হচ্ছে টুর্নামেন্টে। ওপেনিংয়ে তিলকরত্নে দিলশানের সঙ্গে ৪.১ ওভারেই ৫২ রানের জুটি তামিমের। এনামুল হকের সঙ্গে অধিনায়কের ৬৫ রানের পরের জুটি ১০ ওভারের মধ্যেই এক শ পার করে দেয় দলকে। তামিমের ফিফটি ২৯ বলে। ৩ ছক্কা, ৩ চারে জীবন মেন্ডিসের মাত্র ১৮ বলে ৩৯ আর আসিফ আহমেদের ১৫ বলে অপরাজিত ১৭ নিয়ে ভাইকিংসের ইনিংস শেষ হয় ১৮৭ রানে।
ম্যাচ শেষে তামিমের উপলব্ধি যদিও, ‘আমরা ২০টা রান কম করেছি’, রংপুরের ইনিংসের শুরুটাও মনে করাচ্ছিল বিশাল জয়ই পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আমির-তাসকিন-শফিউল পেসারত্রয়ীর সামনে মাত্র ২৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল রংপুর রাইডার্সের। নতুন বল হাতে ২ ওভারে ২২ রান দিয়ে আর বোলিংয়েই আসেননি আগের রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরা রংপুর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যর্থ তিনি ব্যাট হাতেও। তবে সৌম্য সরকার ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। দলের ২২ রানে তাঁর একারই ছিল ৯ বলে ২০। কিন্তু ওই ২২ রানেই একে একে গেলেন ওপেনার লেন্ডল সিমন্স, সৌম্য আর মোহাম্মদ মিঠুন। মোহাম্মদ আমিরের বলে সিমন্স মিড অফে ক্যাচ দিয়েছেন তামিমকে, সৌম্য সন্দেহজনক এলবিডব্লু একই বোলারের বলে আর মিঠুনকে এলবিডব্লু করেছেন তাসকিন। ১ রান পর সাকিবেরও বিদায় দলকে খাদের কিনারাতেই নিয়ে যায়! তখন কি আর কেউ জানত, ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে যাচ্ছে রাইডার্স! আল আমিন-থিসারা পেরেরাকে নিয়ে অসাধারণ এক ম্যাচ উপহার দিতে যাচ্ছেন মিসবাহ!
আল আমিনের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৬৪ রানের জুটিতে বিপর্যয়ে বাঁধ, পরের উইকেটে পেরেরার সঙ্গে ৮০ রানের আরেক জুটিতে রংপুর রাইডার্সকে জয়েরই কাছাকাছি নিয়ে যান পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। ১৯তম ওভারে আমিরের ইয়র্কারে বোল্ড হলেও মিসবাহ যা করার করে দিয়েছেন ৩৯ বলে ৬১ রানের ইনিংসেই। তবে শেষ ৩ ওভারে ৪৩ রান থেকে মাত্র ১ ওভারেই ব্যবধানটা ১২ বলে ২২—এ নামিয়ে আনার কৃতিত্ব পেরেরার। জিয়ার করা ১৮তম ওভারে দুই ছক্কা আর এক বাউন্ডারিতে ২১ রান নিয়ে এই শ্রীলঙ্কানই ম্যাচে শেষ মোচড়টা আনেন। আর শেষ আঁচড় দিতে তো স্যামি ছিলেনই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৮৭/৭ (তামিম ৫১, দিলশান ২৯, এনামুল ৩৬, মেন্ডিস ৩৯, জিয়া ২, চিগুম্বুরা ১, আসিফ ১৭*, আমির ১, শফিউল ৪*; সাকলাইন ৩/২৬, জায়েদ ২/২৬, আল আমিন ০/১৮, স্যামি ০/১৯, সাকিব ০/২২, পেরেরা ০/৩৮, আরাফাত ০/৩৮)। রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮৮/৮ (সিমন্স ১, সৌম্য ২০, মিঠুন ০, মিসবাহ ৬১, সাকিব ১, আল আমিন ৩৮, পেরেরা ৪৩, স্যামি ১৮, আরাফাত ১*, সাকলাইন ১*; আমির ৪/৩০, চিগুম্বুরা ১/৯, তাসকিন ১/৩৫, শফিউল ১/৪১, এনামুল জু. ০/২০, মেন্ডিস ০/২২, জিয়া ০/৩০)।
ফল: রংপুর ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মিসবাহ-উল-হক (রংপুর রাইডার্স)।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৫:২১ ২৭৭ বার পঠিত