বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ব্যাংক হিসাব খোলার পর ৯১ শতাংশ আমানতকারীর মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব জন্মে। তা ছাড়া বেশির ভাগ আমানতকারীর পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যাংক হিসাব থাকে, অনেক ক্ষেত্রে সেটা একই ব্যাংকে হয়। অর্থাৎ পরিবারের একজন ব্যাংক সেবার সঙ্গে যুক্ত হলে ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও ব্যাংক সেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মানসিকতা জন্মে।
২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের দুই হাজার ৯৫৭ জন আমানতকারীর মধ্যে জরিপ করে বিআইবিএমের গবেষকরা এ তথ্য তুলে এনেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
জরিপটি পরিচালিত হয় দুই হাজার ৩৩৬ জন পুরুষ ও ৬২১ জন নারী আমানতকারীকে নিয়ে। তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ আমানতকারী ব্যাচেলর ও এর ওপরের মানের শিক্ষিত, ৩৫ শতাংশ এইচএসসি পাস, ১০ শতাংশ এসএসসি পাস এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করা আমানতকারী রয়েছে ৮ শতাংশ।
‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে আমানতকারীদের উপলব্ধি ও আচরণ’ শীর্ষক ওই সেমিনারে এই সমীক্ষা তুলে ধরেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ও পরিচালক (ডিএসএমবি) মো. মহিউদ্দিন সিদ্দিক। সমীক্ষাটি সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করেছেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মো. শহিদ উল্লাহ, প্রভাষক নূর আল ফয়সাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল স্ট্যাবলিটি বিভাগের উপপরিচালক এন এইচ মনজুর-ই-মাওলা।
সমীক্ষায় দেখা যায়, উচ্চ মুনাফার আশায় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে চলে যাওয়া আমানতকারীর হার ২৭ শতাংশ। টিভি বিজ্ঞাপন দেখে ব্যাংক হিসাব খোলায় আগ্রহ জন্মে ৫০ শতাংশ আমানতকারীর মধ্যে। বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয় ৪৫ শতাংশ আমানতকারী।
১১ শতাংশ আমানতকারী আমানতের বিপরীতে ঋণ নিয়ে থাকে। টাকা তুলতে ৫১ শতাংশ আমানতকারী এটিএম বুথ ব্যবহার করে। চেকের মাধ্যমে টাকা তোলে ৩৬ শতাংশ আমানতকারী। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা তোলে ১৩ শতাংশ আমানতকারী।
ব্যাংক খোলার সময় নিজে আবেদন ফরম পূরণ করে ৭৭ শতাংশ আমানতকারী। ১৭ শতাংশ ফরম পূরণ করে দেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাকি ৬ শতাংশের ফরম বন্ধু বা অন্য কেউ পূরণ করে দেয়। ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদন ফরমে শর্তগুলো পড়ে দেখে ৫৫ শতাংশ আমানতকারী। বাকি ৪৫ শতাংশ আমানতকারী তা পড়েও দেখে না।
২০১৪ সাল শেষে দেশের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৩ হাজার ১১২ কোটি টাকা। ১৯৭৫ সালে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৮ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতে মোট আমানতে তলবি আমানতের অংশ ধীরে ধীরে কমে আসছে। সমীক্ষা মতে, ১৯৭৫-৭৬ সালে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৩৯ শতাংশ ছিল তলবী আমানাত। ২০০৫-০৬ সালে এর হার ছিল ১২.৫১ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ সালে এই হার দাঁড়িয়েছে ১০.৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে মেয়াদি আমানতের অংশ বেড়েছে ঢের। ১৯৭৫-৭৬ সালে মোট আমানতে ৬১ শতাংশ ছিল মেয়াদি আমানত। ২০০৫-০৬ সালে মেয়াদি আমানতের অংশ বেড়ে হয় ৮৭.৪৯ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ সালে এই হার বেড়ে হয় ৮৯.৬৫ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ব্যাংক আমানতের অবদান ১০.২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬.১৯ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৭৫-৭৬ সালে জিডিপির ১০.২৪ শতাংশ ছিল ব্যাংক আমানত এবং ২০১৪-১৫ সালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬.১৯ শতাংশে।
মোট আমানতে বেসরকারি ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ৬৩.৫২ শতাংশ, সরকারি ব্যাংকের আমানত ২৬.২১ শতাংশ, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ৪.৮৪ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ছিল ৫.৪২ শতাংশ।
মোট আমানতে সরকারি ব্যাংকের আমানতের হার দিন দিন কমে আসছে। ১৯৭৫ সালে মোট আমানতের ৮৯.৯৭ শতাংশ ছিল সরকারি ব্যাংকগুলোর। ১৯৮৫ সালে এই হার কমে ৭০.৬০ শতাংশ হয়। ১৯৯০ সালে এই হার আরো কমে ৬৩.৪৪ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৪ সালে মোট আমানতের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬.২১ শতাংশে।
মোট আমানতে শহরের তুলনায় গ্রামের আমানতের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ১৯৮০ সালে মোট আমানতে ৮৫.৬০ শতাংশ আমানত ছিল শহরের এবং গ্রামের আমানত ছিল ১৪.৪০ শতাংশ। ২০১৪ সালে এসে এই হার হয়েছে যথাক্রমে ৮০.৮৭ শতাংশ ও ১৯.১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাসেম বলেন, আমানতকারী ও শেয়ারগ্রহীতাদের স্বার্থ সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের আস্থা যেন উঠে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেই সব কিছু করা হয়। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন পূবালী ব্যাংকের এমডি এম এ হালিম চৌধুরী, এবি ব্যাংকের এমডি শামিম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৭:০৯ ১৪৪১ বার পঠিত