বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধে নতুন বছরের শুরুতেই জাতীয় সংসদে বিল আসছে। এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রস্তাবটি বিল আকারে উত্থাপনের পরিকল্পনা আছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, মার্চের আগেই জামায়াত নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিলটি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্থাপন করা হতে পারে। এ সংক্রান্ত সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
নেদারল্যান্ডস সফর শেষে ৮ নভেম্বর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কি জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস দমন আইনসহ বিভিন্ন আইনে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সুযোগ রয়েছে। এখন সরকার ইচ্ছে করলেই সংবিধান ও আইনের বিধান প্রয়োগ করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।
আইনজীবীরা মনে করেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধের দুটি উপায় রয়েছে। একটি হচ্ছে প্রশাসনিক আদেশ এবং অন্যটি বিচারের মাধ্যমে। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের (গ) ও (ঘ) উপ-অনুচ্ছেদ, রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭২ ও দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮-এর বিধিবিধান অনুসরণ করে যে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা যায়। এজন্য সরকারের সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
আইনজীবীরা মনে করেন, ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে। এই আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ধর্মের নামে বা ধর্মের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গড়া কোনো সংগঠন, ইউনিয়ন বা গোষ্ঠীর সঙ্গে কেউ যুক্ত হতে পারবে না। এ ধরনের সংগঠনকে সরকার গেজেটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে পারবে। সরকার ওই সংগঠনের সমূহ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। নিষিদ্ধ হওয়ার পর এ ধরনের কার্যক্রমে আবার কেউ যুক্ত হলে তাকে ৩ বছরের জেল অথবা জরিমানা বা দুটিতেই দণ্ডিত করা যাবে’।
এর বাইরে আছে সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ (২০০৯ সালের ১৬ নাম্বার আইন)। এই আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার কোনো সংগঠনকে সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, আদেশ দ্বারা, তফসিলে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করতে পারবে।’ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কাজেই এক্ষেত্রে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগে কোনো বাধা নেই।
এদিকে একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল হিসেবে জামায়াতের বিচারেরও সুযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে সংশোধিত ট্রাইব্যুনাল আইনে ব্যক্তির বিচার করার সুযোগ সৃষ্টি হলেও কোনো সংগঠনের বিচারের সুযোগ ছিল না।
এজন্য ২০১১ সালে সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনা হয়। এরপর ১৮ আগস্ট থেকে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করে। যদিও সে তদন্ত আজও আলোর মুখ দেখেনি।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৪০ সালের ৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী তিন দফায় নিষিদ্ধ হয়েছিল। আর দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল জামায়াত। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক দলের অধ্যাদেশের মাধ্যমে দলটি আবার পুনরুজ্জীবিত হয়। বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৭:৩৩ ৩০৮ বার পঠিত