বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ মিয়ানমারে পার্লামেন্ট নির্বাচন গত রোববার হলেও গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত অর্ধেকের কম আসনের ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে বিজয়ী অং সান সু চির এনএলডির কর্মী-সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের শঙ্কা ও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে তাঁরা এ-ও মনে করেন, এবার নব্বইয়ের পুনরাবৃত্তি হবে না। গতকাল রাতে ইয়াঙ্গুনের কূটনীতিক, সাংবাদিক ও সেখানে দায়িত্বরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।
ইয়াঙ্গুনে দায়িত্বরত দক্ষিণ এশীয় একটি দেশের একজন কূটনীতিক আভাস দিয়েছেন, প্রকােশ্য না বললেও ক্ষমতাসীন মহল ও বিরোধী এনএলডির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হচ্ছে।
সাংবিধানিক সংকট উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ওই কূটনীতিক বলেন, অং সান সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা থাকলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে বাধা নেই। তিনি দুজন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন হতে পারেন অথবা সেনাবাহিনী রাজি হলে এনএলডি থেকে তাঁর মনোনীত অন্য কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। আর একটি বিকল্প হলো, সু চি নিজে কোনো পদ না নিয়ে বাইরে থেকে সরকার পরিচালনা করবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ভারতে বিরোধীদের আপত্তির মুখে সোনিয়া গান্ধীর সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার গঠিত হলেও সোনিয়া গান্ধীই নেপথ্যে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। নির্বাচনের পর সু চি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও সেই ধরনের ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘তাঁর কোনো সহকর্মী সেই পদ গ্রহণ করলেও বড় বড় সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। যে নামেই ডাকা হোক, গোলাপ গোলাপই।’
২৫ বছর পর অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ৬৬৪টি আসনের মধ্যে ৪৯১টিতে রোববার ভোট নেওয়া হয়। বাকি ১৬৬টি সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত এবং সান প্রদেশে জাতিগত সংঘাতের কারণে সাতটিতে নির্বাচন হতে পারেনি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মিয়ানমার টাইমস-এর হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ মিলে ২২৪টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে সু চির এনএলডি পেয়েছে ১৪২টি, ক্ষমতাসীন ইউএসডিপি ১২টি এবং অন্যান্য দল ১১টি আসন।
তবে সাবেক জেনারেল উ টিন আইয়ের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, তারা আন্তরিকভাবেই কাজ করছে। কিন্তু দূরবর্তী আসনগুলোর তথ্য পেতে দেরি হওয়ায় ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা উ মিন্ট নেইং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব ফল প্রচার করা হবে।
এদিকে নির্বাচনের পর রাজধানীসহ গতকাল সারা দেশের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। এনএলডি-প্রধান অং সান সু চি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলেছেন। নির্বাচনের দিন রাতে এনএলডির প্রধান কার্যালয়ের সামনে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় লক্ষ করা গেলেও গতকাল ছিল একেবারে ফাঁকা। সেখানে দায়িত্বরত নেতা-কর্মী ছাড়া কেউ ছিলেন না বলে প্রথম আলোকে টেলিফোনে জানিয়েছেন গতকাল সেই কার্যালয় ঘুরে আসা একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা। পুরো ফল ঘোষণা কিংবা ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত কোনো অঘটন যাতে না ঘটে, সে জন্যই এনএলডির এই বাড়তি সতর্কতা। তাদের আশঙ্কা, কোনো অঘটন ঘটলে সেনাবাহিনী সুযোগ নিতে পারে।
এবারের নির্বাচনে এনএলডি যে অভাবিত বিজয় পেয়েছে, তাতে ফলাফল উল্টে দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক কিংবা কূটনীতিকেরা। সাংবাদিক বার্টিল লিন্টনার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের রাজনীতি পর্যবেক্ষক করে আসছেন, ইংরেজি সাময়িকী ইরাবতীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার ঝুঁকি তারা (সেনাবাহিনী) নিতে সাহস পাবে না।
একটি বেসরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশি নাগরিক তৌহিদ ইবনে করিম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময়ও ইয়াঙ্গুনে ছিলেন। দুটি নির্বাচনের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। সেবার ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। এবার সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এবার যাঁরা প্রথম ভোট দিয়েছেন, তাঁদের উৎসাহ ছিল বেশি। কেননা, ২৫ বছর তাঁরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তিনি আরও জানান, ‘ভোটকেন্দ্রগুলোকে আমাদের দেশের মতো ব্যানার-পোস্টারে ভর্তি ছিল না। কোনো পক্ষ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেনি। ভোট গ্রহণের দুদিন আগে থেকে শহরের সব পোস্টার-ব্যানার তুলে ফেলা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৬:০৭ ৩৮৮ বার পঠিত