বঙ্গনিউজ ডটকমঃ সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের অভাবে ও বিক্রি কম হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে কোরবানির চামড়া। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এর মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি আর্থিক সংকটে বেচাকেনা কম হওয়ায় বর্তমানে মজুদ চামড়ার অর্ধেকের বেশি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন অঞ্চলে কোরবানির সময় সংগ্রহ করা ৬০ লাখ পিস চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে এখনও মজুদ রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ পিস। কোরবানির পশুর চামড়া তিন মাস লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। তবে এবার গরমের মধ্যে সংরক্ষণে দেরি ও লবণের পরিমাণ কম দেওয়ায় এর অর্ধেকের বেশি নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চামড়া বিক্রি হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্যানারি মালিকরা অন্যান্য বছরে এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ চামড়া সংগ্রহ করেন। এবার তারা অর্থ সংকটের কথা বলে গত বছরের বকেয়া পরিশোধ করছেন না। একই সঙ্গে নতুন চামড়াও কিনছেন কম। ঈদের সময় নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে কেনাবেচা হওয়ায় বাড়তি দামে চামড়া কিনছেন না তারা। তা ছাড়া অনেক ট্যানারি মালিক ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া কেনা শুরু করেননি। এ অবস্থায় মজুদ চামড়া নিয়ে বিপাকে রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, প্রতি বছর কোরবানির মৌসুমে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়। ইতিমধ্যে এ চামড়ার প্রায় ৯ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আরও ২০ শতাংশ চামড়ায় নানা ধরনের ত্রুটি হয়েছে। অন্যদিকে, এবারের ঈদে ঢাকায় সাড়ে ৫ লাখ পিস চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ পিস ট্যানারি মালিকরা কিনেছেন। এখন আড়াই লাখ পিস চামড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পোস্তার আড়তদাররা।
এ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান সমকালকে বলেন, কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা দুঃসময়ের মধ্যে রয়েছেন। ঈদে ট্যানারি মালিকরা পাওনা টাকা না দেওয়ায় সময়মতো চামড়া কিনে সংরক্ষণ করা হয়নি। ঋণ করে চামড়া কিনে রাখলেও এখন তা কিনছেন না ট্যানারি মালিকরা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দেড় মাসের মধ্যে চামড়া বিক্রি না হলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে আড়তদারদের।
টিপু বলেন, ঢাকার বাইরে অর্ধেকের বেশিরভাগ চামড়া পড়ে আছে। মজুদ চামড়ায় পচন ধরার শঙ্কা রয়েছে। লবণ দিয়ে কোনোভাবে তা সংরক্ষণ করা রয়েছে। দ্রুত এসব চামড়া ট্যানারিতে না গেলে ৩০ লাখ পিস নষ্ট হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন পোস্তার এ ব্যবসায়ী।
ট্যানারি মালিক ও চামড়া রফতানিকারকদের সংগঠন
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার,
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) তথ্য অনুযায়ী, অদক্ষ কারিগর দিয়ে চামড়া ছাঁটাই, উপযুক্ত লবণ না দেওয়া এবং গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে চামড়া নষ্ট হয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের অভাবে এখনও নষ্ট হচ্ছে।
চামড়া রফতানিকারকদের এ সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের সমকালকে বলেন, ইতিমধ্যে সংরক্ষিত চামড়া ট্যানারিতে আনার প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেছে। ট্যানারি মালিকরা টাকার অভাবে চামড়া কিনতে পারছেন না। তারা সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরে অর্থ ব্যয় করে এখন প্রায় খালি হাতে রয়েছেন। অন্যদিকে, গত বছরের মজুদ চামড়া এখনও রফতানি করতে পারছেন না। এ কারণে বেশিরভাগই অর্থ সংকটে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কোরবানির চামড়া কেনাবেচার ইতিহাসের প্রসঙ্গ তুলে প্রবীণ এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এবার ১৯৭৯ সালের অবস্থা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই বছর টাকার অভাবে ট্যানারিতে কম কেনায় অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছিল। তার মতে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে ট্যানারি থেকে ওয়াইড ব্লু করে সংরক্ষণ করলে লোকসান থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৭:৩৯ ৩৪৮ বার পঠিত