বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও জাপানি নাগরিক হোচি কোনিও হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পোশাক শিল্পের বিদেশি ক্রেতারা দেশে আসছেন না বলেও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ প্রচার শুধু সরকারকে চাপে ফেলার উদ্দেশ্যে বলেই মনে করেন বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা।তাঁদের মতে, ক্রেতারা শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশে আসছেন। দু’একটি বৈঠকের সময় পরিবর্তন করে সমন্বয় করা হয়েছে মাত্র। কারণ ওই সময়ে বিজিএমইএর একাধিক নেতা দেশের বাইরে থাকায় তা পরিবর্তন করা হয়েছে। বায়ারস ফোরামের বৈঠক বাতিল হয়নি, স্থগিত করা হয়েছে। যাঁরা পোশাক শিল্পের ক্রেতা বাংলাদেশে আসছেন না বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা শুধু সরকারকে চাপে ফেলার উদ্দেশ্যেই তা করছেন বলে মনে করেন তাঁরা। তবে এ প্রচার ভবিষ্যতে পোশাক শিল্পের ওপর প্রভাব ফেলবে বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও জাপানি নাগরিক হোচি কোনিও নিহত হওয়ার পরবর্তী পাঁচ দিনে নির্ধারিত সূচিতে যেসব ক্রেতার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল, তার মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম তাঁদের সফর বাতিল বা বৈঠকের স্থান পরিবর্তন করেছেন। আর ক্রেতাদের যে অঘোষিত সংগঠনটি বৈঠক বাতিল করেছে, তার কারণ সম্পূর্ণই ভিন্ন।
সূত্র জানায়, বৈঠকের আগে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে সফরে ছিলেন। বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে সংশয়ের জেরেই তা বাতিল করা হয়। কিন্তু একই সময় যেহেতু বিদেশি নাগরিক হত্যার ইস্যুটি সামনে ছিল, তাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর ওই মহল ইস্যুটিকে ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এ ব্যাপারে ভোরের পাতাকে বলেন, ‘সব দেশেই দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। অবশ্যই এটা নিন্দনীয়। তবে একে পুঁজি করে বিশেষ একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে এই ইস্যু নিয়ে যেভাবে নেতিবাচক প্রচার চালানো হয়েছে, এটা দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বিশেষ করে পোশাক খাতে এর প্রভাব পড়বে। দেশে ক্রেতারা স্বাভাবিক নিয়মেই আসছেন। দু’একটি বৈঠকের স্থান পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।’
এ ঘটনার পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও ঘটে। এতে পোশাক খাতে প্রভাব ফেলার মতো কোনো কারণ নেই। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। সরকার সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিচ্ছে।’
তবে বিজিএমইএর অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় হাতিয়ার এখন পোশাক শিল্প। একদিকে দেশি কর্মসংস্থান চাহিদার বড় অংশ পূরণ, অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই শিল্প। তার থেকেও বড় কথা, পোশাক শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। পোশাক রফতানিতে চীনের পরই বিশ্ববাজারে এখন বাংলাদেশের অবস্থান। তাই পোশাক শিল্পে কোনো ধাক্কা আসা মানেই তা পুরো দেশকে নাড়া দেওয়া।
নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলাই স্বার্থান্বেষী ওই মহলের উদ্দেশ্য। আর এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন পোশাক শিল্পের অনেক ব্যবসায়ী। সরকারকে চাপে ফেলে কিছু সুবিধা আদায়ের কথা তাঁরা ভাবলেও এতে যে পোশাক শিল্প ইমেজ সঙ্কটে পড়বেÑ সেদিকে খেয়াল নেই কারোই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৫:৩৪ ৩৩০ বার পঠিত