বঙ্গনিউজ ডটকমঃ সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চাকরি স্থায়ী হলেই ফ্ল্যাট কেনার জন্য আবেদন করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। বেতন পাওয়ার ধাপ (গ্রেড) অনুযায়ী তাঁদের তিন ধরনের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছর থেকেই তা কার্যকর হবে।সচিবালয়ে গত সোমবার ‘সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট ও নৈতিক মনোবল ধরে রাখার জন্য আবাসন প্রকল্প’ সংক্রান্ত বৈঠকে এমন মত উঠে এসেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান জি এম জয়নুল আবেদীন ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক শিরিন আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ বছর পার হওয়ার পর সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরি স্থায়ী হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব একটি ধারণাপত্র তুলে ধরেন, যার মূল সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীসহ উপস্থিত সবাই একমত হন।
ধারণাপত্রে বলা হয়, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পরই তাঁরা ফ্ল্যাট কেনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ষষ্ঠদশ থেকে দশম ধাপে বেতন পাওয়া চাকরিজীবীরা পাবেন ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। নবম ধাপের চাকরিজীবীরা পাবেন ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট এবং অষ্টম থেকে তৃতীয় ধাপের চাকরিজীবীরা পাবেন ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয়েছে জমির মূল্যসহ ৪ হাজার ৫০০ টাকা বর্গফুট।
এ ছাড়া ষষ্ঠদশ থেকে নবম ধাপ পর্যন্ত বেতন পাওয়া চাকরিজীবীদের ৩০ বছরের মধ্যে ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধের কথা বলা হয়। তার ওপরের ধাপের চাকরিজীবীদের মূল্য পরিশোধ করতে হবে ১০ বছর বা চাকরির কর্মকাল যা বেশি, সেই সময়ের মধ্যে।
ধারণাপত্র অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে বাড়িভাড়া বরাদ্দ রয়েছে বা থাকবে, তা থেকেই ফ্ল্যাটের জন্য একটি অংশ কেটে রাখা হবে। বাস্তবায়নের জন্য এর বাইরেও সরকার একটি তহবিল গঠন করবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সংকট দূর করতে দুটি বিকল্প সুপারিশ করেছিল মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরি ও ১০-২০ জন মিলে গড়ে তোলা দলের মাধ্যমে জমি কিনে ফ্ল্যাট নির্মাণ। এ জন্য স্বল্পসুদে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ারও সুপারিশ ছিল।
রাজধানীর দৈনিক বাংলায় থাকা সরকারি জমি থেকে ২০-২৫ কাঠা জমি বিক্রি করে ‘সমৃদ্ধির সোপান ব্যাংক’ নামে একটি ব্যাংক গঠনেরও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। যে ব্যাংক থেকে এক অঙ্কের সুদে ঋণ দেওয়ারও সুপারিশ রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি সমৃদ্ধির সোপান ব্যাংকের মাধ্যমেও করা যেতে পারে। তবে গোটা বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে রাজউক। রাজউককে এ জন্য শিগগির একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের নামে চাকরিজীবীদের কাছ থেকে মাসিক ৪০ টাকা কেটে রাখা হয়। এই হার বাড়িয়ে সেখান থেকেও কিছু অংশ ফ্ল্যাটের জন্য ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়।
জানতে চাইলে কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের মহাপরিচালক শিরিন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে প্রথম বৈঠক হয়েছে, আরও বৈঠক করতে হবে। তারপর বিষয়টি চূড়ান্ত আকার পাবে।
সূত্র জানায়, একটি বিষয়ে বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন যে রাজধানীর মিরপুর ৯ নম্বরে রাজউকের জমিতে হবে নতুন পদ্ধতির প্রথম ভবন। বিভাগীয় শহরে ১৪ তলাবিশিষ্ট দুটি করে ভবন নির্মাণ করা হবে। একে একে ভবন হবে জেলা শহরগুলোতে।
জানা গেছে, অষ্টম বেতনকাঠামোর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার দিন সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গৃহায়ণ ঋণ
ছয় মাস বন্ধ রাখার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
তবে ফ্ল্যাট পাওয়ার বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।
কী হতে যাচ্ছে-জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের সুব্যবস্থার জন্য নতুন উপায় বের করতে আমরা প্রাথমিকভাবে বসেছিলাম। চলতি মাসে আবার বসব।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪২:০১ ৩২৭ বার পঠিত