বঙ্গনিউজ ডটকমঃ নওগাঁর পোরশায় তিন বছর ধরে চলছে মাটি খনন। মাটি খনন করে পাওয়া যাচ্ছে গুপ্তধন। গুপ্তধন পাওয়ার আশায় প্রতিযোগিতার মতো এখানকার মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আবাদি জমি কেউ বা আবার রোপণকৃত ধানের জমি খনন করেই চলেছেন। আর পাচ্ছেন দামি দামি সব গুপ্তধন।
পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার পুনর্ভবা নদীর পুব পাড়ের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে গুপ্তধন পাওয়ার এ প্রতিযোগিতা। কেউ নিজের জমিতে আবার কেউ অন্যের জমি টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক কিনে নিয়ে খনন করেই চলেছেন।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে পশ্চিম রঘুনাথপুর জেলেপাড়ার বৃদ্ধ আবদুল কাদের বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র পাথর পান। পাথরের মাঝখানে ছোট ছিদ্র ছিল। পাথরগুলো দেখতে তসবির মতো। যেগুলো মুসল্লিরা ইবাদতে কাজে লাগান। তিনি তখন তার গ্রামের মসজিদে আজান দিতেন। তিনি পাথরগুলো পাওয়ার পর কখনই চিন্তা করেননি যে সেগুলো মূল্যবান। তাই তিনি তাদের মসজিদে ইবাদতের কাজে লাগানোর জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরগুলো দিয়ে তসবি তৈরি করেন এবং ইবাদত করেন। কয়েক মাস পর কোনো এক লোক ওই মসজিদে নামাজ পড়ে তসবিটি দেখে তার পছন্দ হয়েছে বলে বৃদ্ধ আবদুল কাদেরকে জানান। বৃদ্ধ দিতে না চাইলে সেটি তিনি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিলে তা ৫০০ টাকার বিনিময়ে ওই লোকের কাছে বিক্রি করেন। এরপর বৃদ্ধ কাদেরের মনে সন্দেহ হয় সেটি নিশ্চয়ই মূল্যবান পাথর। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার লোকজন শুরু করেন মাটি খনন। সেই থেকে প্রতিদিন সকাল হলেই স্থানীয়রা যে যার মতো কোদাল ও খুনতি দিয়ে মাটি খনন করেই চলেছেন। আর পাচ্ছেন মূল্যবান সব জিনিসপত্র। প্রায় ৪ থেকে ৫ ফুট নিচে মাটি খনন করলেই পাওয়া যাচ্ছে পয়সা, তাবিজ, তসবিহ, কলম, মার্বেল, চাকি, ঢোল, জালি পোটল, বোতামসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এসব জিনিস লাল, কালো, সাদা, সবুজসহ একেকটির রং একেক রকম। এসব মূল্যবান পাথরের জিনিস পাওয়া মাত্র বিক্রি করে দেন স্থানীয়রা। সর্বনিন্ম যে পাথরটি তার দাম বর্তমানে ৬০ টাকা আর সর্বোচ্চটির দাম ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে এ রকম দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম জানান, তার বাড়ির পশ্চিম মাঠে পোরশা সদরের আলহাজ ওহাব শাহের জমি রয়েছে। তার কাছ থেকে তিন বছরের জন্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ বিঘা জমি কিনে নেন তিনি। উদ্দেশ্য জমির মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সব জিনিসপত্র উদ্ধার। বর্তমানে ওই জমিতে ধান রোপণ করা আছে। তাই তিনি মূল্যবান জিনিসপত্র পাওয়ার আশায় ধানের জমিগুলো খনন করেই চলেছেন। এখন পর্যন্ত ওই জমি থেকে ২টি চিরুনি পেয়েছেন যা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ২টি জালি পেয়েছেন যা ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। ৩টি ফুটবল পেয়েছিলেন যা বিক্রি করেছেন ১৩ হাজার টাকায় এবং কয়েকটি মার্বেল বোতামসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করেছেন ৩ হাজার টাকায়। তবে ৩ বিঘার মধ্যে এগুলো পেয়েছেন মাত্র ১ বিঘা খনন করে। এখনো ২ বিঘা খনন করা বাকি রয়েছে।
সেখানকার জমি মালিকদের মধ্যে যাদের বাড়ি বাইরে বা দূরে তারা টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক জমি বিক্রি করছেন। আর কিনছেন স্থানীয়রা। একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে মোজাম্মেল হক জানান, প্রায় তিন বছর আগে জানাজানি হয় আমাদের এলাকার মাটির নিচে অনেক গুপ্তধন রয়েছে। তবে বিষয়টি গোপন ছিল বলে অনেকেই জানতে পারেননি। মাটি খনন করার পর জিনিসগুলো তারা গোপনে নওগাঁ বা বগুড়ার ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। একই গ্রামের ফইমুদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে তাদের নিজের ৫ কাঠা জমি খনন করে ১টি চাকি পেয়েছেন। সেটি বিক্রি করেছেন ১ হাজার টাকায়। ঠোল পেয়েছিলেন ২টি যা বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকায়। আর জালি পোটল ২টি পেয়ে বিক্রি করেছেন ৬০ হাজার টাকায়। কয়েকটি মার্বেল ও বোতাম পেয়ে সেগুলো বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকায়।
স্থানীয়দের ধারণা, এখান থেকে হিন্দুরা চলে যাওয়ার সময় তাদের মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো তারা নিয়ে যেতে পারেননি। পরে তাদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরগুলো ভেঙে মাটির নিচে চাপা পড়ে। আর সেই মূল্যবান জিনিসগুলো এখন বের হচ্ছে। -
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৪:৩২ ৩১৪ বার পঠিত