বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রপ্তানি বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। পণ্য রপ্তানি যেমন কমেছে, তেমনি হ্রাস পেয়েছে সেবা রপ্তানিও। অথচ গড় আমদানি বেড়েছে অনেক বেশি। পাশাপাশি কমেছে বৈদেশিক বিনিয়োগও।
জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (এসকাপ) গত সোমবার রাতে এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৫ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ নিয়ে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির বিস্তারিত পর্যালোচনা রয়েছে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ নিয়েও আলাদা বিশ্লেষণ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মোট আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে চীনকে বাদ দিলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ কমেছে দশমিক ৪ শতাংশ। আর ২০১৩ সালে এই অঞ্চলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেড়েছিল ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিকের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে।
পণ্য বাণিজ্য: প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০১০ থেকে ২০১৪-এর গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। ওই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রপ্তানি ভিত্তি তুলনামূলকভাবে বহুমুখী। দেশটি ২ হাজার ২০৮ ধরনের পণ্য ১২২টি দেশে রপ্তানি করে। আর এ ক্ষেত্রে এশিয়া-প্যাসিফিকের গড় হচ্ছে ২ হাজার ১০৭টি পণ্য ও ৯৫টি দেশ। বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত তৈরি পোশাক ও বস্ত্রনির্ভর হলেও দেশটি জাহাজ নির্মাণ ও ওষুধ প্রস্তুতের শক্তিশালী শিল্প গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যার মধ্যে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য বৃহত্তম বাজার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের আমদানি বেড়েছে দ্রুত, ১৪ শতাংশ। অথচ ২০১০-১৪ সালের গড় বৃদ্ধির হার ছিল
১১ শতাংশ। বাংলাদেশের আমদানির বড় অংশই বস্ত্র। তবে অন্যান্য ক্ষুদ্র অর্থনীতির মতো এখানেও সবচেয়ে বেশি আমদানি করা পণ্য হচ্ছে জ্বালানি তেল। আর মোট আমদানির প্রায় অর্ধেক বা ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ আসে চীন ও ভারত থেকে।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সেবা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে সেবা আমদানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ মধ্যবর্তী পণ্য অনেক বেশি আমদানি করে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এর পরিমাণ ২২ শতাংশ হলেও বাংলাদেশের আমদানি ৪৫ শতাংশ। অথচ রপ্তানি করে ৩ শতাংশ। যদিও এই অঞ্চলে এর গড় ১৮ শতাংশ। বেশি হারে কাপড় ও তুলা আমদানি এবং তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ বস্ত্র খাতের গ্লোবাল ভ্যালু চেইন প্রক্রিয়াকরণ ধাপের অন্তর্ভুক্ত।
বৈদেশিক বিনিয়োগ: প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-১৪ সময়ের ধারাবাহিক ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির পর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ সাড়ে ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ মূলত টেলিকম ও বস্ত্র খাতে হয়েছে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের কারণে পোশাক খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কার্যকরী ট্যারিফ হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।
বাণিজ্য চুক্তি: বাংলাদেশের মোট পাঁচটি বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, যা এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকার ৭ দশমিক ১ গড়ের চেয়ে কম। অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তির অংশীদার দেশসমূহে মোট রপ্তানির ৯ শতাংশ রপ্তানি হয়, যা এই অঞ্চলের ৩৫ শতাংশ গড়ের তুলনায় কম। আবার মোট আমদানির ৬০ শতাংশ হয় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির অংশীদার দেশগুলো থেকে। অথচ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গড় ৪৫ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব সক্রিয় নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০:৫৮ ৩৮২ বার পঠিত