বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ও ক্যালিফোর্নিয়ার জে ক্রেইগ ডেনটার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। জানিয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’। কৃত্রিম প্রাণের এই আবিষ্কারকে বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম মাইলস্টোন ও মানবসভ্যতার এক মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি।
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘সায়েন্স’ সাময়িকীর মতে, কৃত্রিম প্রাণ সৃষ্টির এ কৌশল বহু প্রাণঘাতী রোগের নিরাময়ে সহায়ক হবে। জ্বালানি সমস্যার সমাধান হবে এবং গ্রিনহাউস শোষণের ক্ষেত্রেও এ আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। নিঃসন্দেহে কৃত্রিম প্রাণ তৈরির ইতিবাচক গবেষণায় মানবসমাজে এর সুফলের ব্যাপ্তি সীমাহীন হবে।
ventner_1641077cপ্রতিবেদনে বলা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান জীববিজ্ঞানী ড. জে ক্রেইগ ভেনটারির নেতৃত্বে মেরিল্যান্ড ও ক্যালিফোর্নিয়ার জে ক্রেইগ ডেনটার ইনস্টিটিউটের ২০ জন গবেষক টানা ১৫ বছর গবেষণা করে কৃত্রিম প্রাণ তৈরির এই অসম্ভবকে সফল করতে সক্ষম হয়েছেন। এ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রাণ তৈরির নতুন যুগে প্রবেশ করলো মানুষ।
এতে উল্লেখ করা হয়, সেই প্রাগৈতিহাসিককালে প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে যখন মোস্টারিয়ান ‘সভ্যতার’ যুগে কৃত্রিমভাবে আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করা হয়, তখন থেকেই মানুষ মানুষ হিসেবে ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়ে প্রবেশ করে। এ অভাবনীয় সাফল্যে মানুষ হয়ে ওঠে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। একই সঙ্গে তার চিন্তার বিকাশও প্রচণ্ড গতি লাভ করে। ফলে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে তাদের সামগ্রিক শক্তিমত্তায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়।
এ সাফল্য ছিল মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক মৌলিক ও বিশাল টার্নিং পয়েন্ট। আগুন জ্বালানোর সেই কৌশল আবিষ্কারের ৩০ হাজার বছর পর মানুষের আরেকটি অবিস্মরণীয় আবিষ্কার সারা বিশ্বকে চমকে দেয়। সেই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি হচ্ছে জিন ম্যাপিং, অর্থাৎ মানব-দেহকোষে বিদ্যমান জিনের গঠন-কাঠামোর খসড়া মানচিত্র প্রণয়ন। মানুষ সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিতভাবে জানতে সক্ষম হয়েছে জিনের পূর্ণাঙ্গ রূপ, মাত্রা ও গঠন-প্রকৃতি।
covermed1বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলা হয়, বস্তুত জিন ম্যাপিং হচ্ছে এক ধরনের জৈব রাসায়নিক নির্দেশনা। জিনের রাসায়নিক সংকেত উদ্ধারের ফলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাপক ও বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা, ধ্যান-ধারণা এবং পদ্ধতির পরিবর্তন আসছে। বিজ্ঞান দর্শন এ সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তি, তথ্য-প্রমাণ, ব্যাখ্যা, তর্ক-বিতর্ক উপস্থাপন করলেও প্রাণ সৃষ্টির বিষয়টি এক অপার ও দুর্জ্ঞেয় রহস্য হিসেবেই এতকাল চিহ্নিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল প্রকল্প হিউম্যান জেনোম প্রজেক্টের (এইচজিপি) বিজ্ঞানীরা জিন মানচিত্রের খসড়া প্রণয়নে যে সাফল্যের কথা ২০০০ সালে জানিয়েছিলেন, সেটিই ছিল প্রাণ সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটনে মানুষের লাখো বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুগান্তকারী ঘটনা।
বিজ্ঞানীরা তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রাণ সৃষ্টির রহস্য অচিরেই উন্মোচিত হবে। মানুষ এখন ঈশ্বরের প্রাণ সৃষ্টির ভাষা আয়ত্ত করতে চলেছে। খুব শিগগিরই ক্ষুধা-জরা-ব্যাধি আর বার্ধক্যকে জয় করে মানুষ এগিয়ে যাবে মৃত্যুকে জয় করতে। তারা আরো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন মানুষ কৃত্রিমভাবে প্রাণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। কৃত্রিম প্রাণ তৈরির প্রক্রিয়ার শুরুতে প্রথমে বিজ্ঞানীরা ‘মাইকোপ্লাজমা মাইকইড’ ব্যাকটেরিয়ার জেনোমের অনুলিপি তৈরি করেন। এর ভিত্তিতে তাঁরা তৈরি করেন একটি সফটওয়্যার, যার সাহায্যে গবেষণাগারে তৈরি করেন কৃত্রিম ক্রোমোজোম। এরপর এ ক্রোমোজোম পুরে দেওয়া হয় একটি পোষক-কোষে।
এরপরই বিজ্ঞান-ইতিহাসের এক অভাবনীয় ঘটনার পর্দা উন্মোচিত হয়। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, পোষক-কোষে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। প্রকৃতিতেও এটি অবিকল মূল ব্যাকটেরিয়ার মতো। কৃত্রিম ব্যাকটেরিয়াটি স্বাভাবিকভাবে বংশবিস্তার করছে এবং জন্ম নেওয়া প্রতিটি ব্যাকটেরিয়ায়ই রয়েছে কৃত্রিম ডিএনএ। কৃত্রিম প্রাণ তৈরি 0,,15918091_302,00মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক মহামহিম সাফল্য। এ আবিষ্কার প্রকৃতিকে বোঝার এবং আয়ত্তে আনার মানবজাতির দীর্ঘ ও নিরন্তর বৌদ্ধিক সংগ্রামে অর্জিত এযাবৎকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। বিজ্ঞানের যে কটি মৌলিক আবিষ্কার এবং যেসব আবিষ্কারের সূত্র ধরে মানবসমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, এটি হবে তার অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১১:৫৪ ৪৫৫ বার পঠিত