বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
নানা প্রতিকূলতার পরও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানটি অপরিবর্তিত রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ। আর বিশ্ববাজারে হিস্যা ছিল ৫.১ শতাংশ। গত বছর প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৬০ শতাংশ। তবে পোশাকের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশ একই রয়ে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান-২০১৫’ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের বাণিজ্য বিশ্লেষকরা জানান, অবস্থান অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে বড় সাফল্য। প্রতিযোগী দেশগুলোর যে হারে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, সে হারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ অবস্থান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী দেশগুলো উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। এই অবস্থায় অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে বলে মত দেন তাঁরা। আর এ জন্য পোশাক খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কমপ্লায়েন্স এবং বাজার ও পণ্যে বহুমুখীকরণের ওপর আরো গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।
গত সপ্তাহে ডাব্লিউটিও প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরই বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে ২০১৪ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ডাব্লিউটিওর প্রতিবেদনে দেখা যায়, চীন এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে চীনের শেয়ার ৩৮.৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২৮টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ইইউ দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। যার বিশ্ববাজারে হিস্যা ২৬.২ শতাংশ। তবে ইইউর ২৮টি দেশকে আলাদা করলে অবশ্য এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চীনের পরই বা দ্বিতীয় স্থানে।
অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ আর বিশ্ববাজারে দেশটির হিস্যা ৪ শতাংশ। ভারতের বিশ্ববাজারে অবস্থান গত বছরের চেয়ে বেড়েছে একেবারেই কম। ২০১৩ সালে হিস্যা ছিল ৩.৬৫ শতাংশ। এটা ২০১৪ সালে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৭০ শতাংশ। এ সময় দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ শতাংশ।
শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, পঞ্চম ভারত, ষষ্ঠ তুরস্ক, অষ্টম ইন্দোনেশিয়া, নবম যুক্তরাষ্ট্র এবং দশম স্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল ৩.৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ২৫ শতাংশ বেড়ে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে ২০০৯ সালের পঞ্চম অবস্থান থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উঠে আসে তৃতীয় স্থানে।
আর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের পোশাক খাতের বার্ষিক রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, ২০১২ সালে ছিল এক হাজার ৯৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অবস্থান ধরে রাখা একটি সুসংবাদ। কারণ পোশাকের প্রতিটি খাতে মূল্য বৃদ্ধির ফলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছে উদ্যোক্তরা। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কারখানা সংস্কার, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তদারকিতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তার পরও সরকারের নীতি সহায়তা, উদ্যোক্তাদের সাহসী ভূমিকা এবং শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারা অনেক বড় সাফল্য বলে সালাম মুর্শেদী জানান। এই অবস্থান ধরে রাখতে তিনি রপ্তানি খাতের জন্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে তেলের দামের সমন্বয়, ডলারের বিপরীতে টাকার মান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমন্বয় করা এবং রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ অবস্থান আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ এ সময়ে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী দেশগুলো উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ তার অবস্থান ধরে রাখতে হলে অবশ্যই বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে এবং তা বজায় রাখতে হবে। তিনি এ জন্য পোশাক খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কমপ্লায়েন্সের উন্নয়ন, বাজার ও পণ্যে বহুমুখীকরণের ওপর আরো গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৪:৫৩ ৩৫৩ বার পঠিত