বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা, পুলিশ কর্মকর্তা খুন, তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তাঁরা মধ্য নভেম্বরের মধ্যে এ জাতীয় আরো সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা জানিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে ১৪ দলের এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা এমন মত জানান। নেতারা সন্ত্রাসী হামলার পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকায় সন্তোষ জানালেও ঘটনা প্রতিরোধে তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলেও মত দেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে ২ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা সফলের লক্ষ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামাল, জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জেপির শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, ন্যাপের এনামুল হক ও ইসমাইল হোসেন, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার প্রমুখ।
বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান ১৪ দলের শরিকরা। জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান, গণআজাদী লীগের আহ্বায়ক এস কে সিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান তাঁদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিচার বানচাল করতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরো হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কয়েকজন নেতা জানান, সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ত্র আমদানি করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে না পারলে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হতে পারে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার রিভিউ আবেদনের শোনানি হবে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিরও দিন রয়েছে এ সপ্তাহেই। এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এমন পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করে শেখ শহীদ বলেন, ‘নভেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়তে ও সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা রয়েছে। শুনেছি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইতিমধ্যে প্রচুর অস্ত্র আমদানি করছে। ফলে আগামী দুই সপ্তাহ প্রশাসনকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।’
শেখ শহীদ আরো বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী হামলার পরে যেভাবে তৎপর হয় তা সন্তোষজনক। কিন্তু এসব ঘটনা প্রতিরোধে তাদের ভূমিকা হতাশাজনক। তাদের আরো তৎপর হতে হবে।’
এনামুল হক বলেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি তেমন স্বাভাবিক নয়। এটিকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের ও খালেদা-তারেকের বিচার বানচাল করতে নানা অপতৎপরতা চলছে। প্রশাসনের মধ্যেও বিভাজন রয়েছে, সেখানে জামায়াত-বিএনপির লোক রয়েছে।’
বৈঠক সূত্রগুলো জানায়, ওই দুই নেতার মতো একই সুরে বক্তব্য দেন ১৪ দলের অন্য শরিকরা। এমনকি জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের কোনো নেতাও এসব বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত জানাননি।
বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদকে পুতুল নাচের আসর বলায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তীব্র সমালোচনা করেন ১৪ দলের নেতারা। তাঁরা এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মত দেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন টিআইবিকে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বলেও মন্তব্য করেন। তবে আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক টিআইবিকে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম টিআইবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এরা কারা? এদের পরিচয় কী? এই টিআইবির মুখপাত্ররা কী চায়? তারা কী চেয়েছিল? তারা চেয়েছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হোক। আর নির্বাচন না হলে দেশে একটি অসাংবিধানিক সরকার আসবে? সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলেই কি আজকে তাদের এত ক্ষোভ? তারা শুধু পার্লামেন্টকে আক্রমণ করে নাই। যে ভাষা তারা ব্যবহার করেছে এর জন্য টিআইবিকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘কিভাবে তারা বলতে পারে এই পার্লামেন্ট একটি নাট্যশালা? তারা কিভাবে বলতে পারে এই পার্লামেন্ট পুতুল নাচের আসর? যারা এই কথাগুলো বলেছে, একটি রাজনৈতিক দলও সে ভাষায় কথা বলতে পারে না। কিন্তু টিআইবি সে ভাষায় কথা বলেছে। এটা শুধু অমার্জনীয় নয়। তারা বিএনপি-জামায়াতে চেয়েও জঘন্য ভাষায় সংসদকে আক্রমণ করে কথা বলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০৯:১৯ ২৫৩ বার পঠিত