বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যার স্থান থেকে ১৪টি আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। এসব আলামতের মধ্যে এক থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা চুলও রয়েছে, যেগুলো খুনিদের হতে পারে বলে ধারণা করেছেন কর্মকর্তারা। শনিবার সন্ধ্যায় মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয় থেকে দীপনের লাশ উদ্ধারের পর রাত ৯টার দিকে সেখানে যান সিআইডি সদস্যরা। মধ্যরাত পর্যন্ত আলামত সংগ্রহ করেন তারা। আলামত সংগ্রহের পর সিআইডির পরিদর্শক জাকির হোসেন জানান, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে ১৪টি আলামত তারা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া মেডিকেল থেকে দীপনের পরনের কাপড় সংগ্রহ করা হবে। এই সব আলামত পরীক্ষা করে দেখা হবে। জাগৃতির অফিস কক্ষ বা ওই ফ্লোরে কোনো সিসিটিভি না থাকায় ফুটেজ পাননি তারা। এই কর্মকর্তা আলামতের বিস্তারিত না বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মকর্তা জব্ধ তালিকা প্রস্তুতের সময় জানান- চশমা, স্যান্ডেল, রক্ত ও চুলসহ বিভিন্ন জিনিস তারা আলামত হিসাবে জব্ধ করছেন। তিনি বলেন, “এক থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা অনেকগুলো চুল পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে হামলাকারীদের চুলও থাকতে পারে। ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।” আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান নাজু জানান, মার্কেট ভবনের পূর্ব পাশের পার্কিংয়ের প্রবেশপথ ও মূল প্রবেশপথসহ মোট আটটি স্থানে সিসি ক্যামেরা আছে। পেছনের দিকে বা পূর্ব পাশের মেডিসিন মার্কেটের দিক থেকে প্রবেশপথে কোনো সিসিটিভি নেই। এই মার্কেটের সম্মুখভাগে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। এছাড়া মার্কেট ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সীমানা প্রাচীরের ভেতরে আরও দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। এর বাইরে পূর্ব পাশের মেডিসিন মার্কেট দিয়েও আজিজ মার্কেটে প্রবেশ করা যায়। নাজু বলেন, মার্কেটে তিন শিফটে নিরাপত্তা রক্ষী থাকলেও সবাই নিচে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকেন না। “ঘটনার সময় জাগৃতির কার্যালয়ের দুই দোকান পর অবস্থিত উৎস প্রকাশনীতে মানুষ ছিল। তবে সেখানেও তারা দরজা বন্ধ করে কাজ করছিল।” মার্কেটের তৃতীয় তলায় উত্তর করিডোরের পূর্বপাশটা কিছুটা নিরিবিলিই থাকে বলে জানিয়েছেন নাজমুল আহসান নাজু। ওই করিডোরেই ৫-৬ মাস আগে অফিস নিয়েছিলেন দীপন। এর আগে এই অফিসটা দোতলায় ছিল। জাগৃতির বিক্রয় কেন্দ্রটি নীচতলায় অবস্থিত। দীপন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়িতে করে মার্কেটে এসেছিলেন বলে জানান আজিজ মার্কেট পূর্ব পাশের ছোট্ট পার্কিংয়ে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা রক্ষী। মধ্যরাত পর্যন্ত গাড়িটি সেখানেই দেখা যায়। মার্কেটের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা নিয়ে মার্কেটের সভাপতি নাজু জানান, “এখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। ২০-২৫ বছর যাবত উনি মার্কেটে আছেন। আমিসহ অনেকের সঙ্গে তার খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক। উনিও কারও কাছে তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন নাই। “তার সঙ্গে কারও শত্রুতাতো পরের বিষয়, সারা জীবন উনি কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন বলেও শুনিনি।” ফয়সাল আরেফিন দীপনের ওপর ঠিক কখন হামলা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বিকাল ৩টার সময়ও তিনি জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করছেন এই প্রকাশকের এক যুগেরও বেশি সময়ের সঙ্গী জাগৃতির ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনা ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝতে পেরেছি, তাতে মনে হয়, ৩টা পর্যন্ত উনি হয়তো জীবিতই ছিলেন।” ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “দুপুর এক বা দেড়টার দিকে উনি আসেন। এসে আমাদের বিক্রয় কেন্দ্রে যান। সেখান থেকে ভিজিটিং কার্ড নিয়ে আসেন। আড়াইটার দিকে উনি উনার এক বন্ধুর সঙ্গে খাওয়া দাওয়া (মার্কেটের একটি রেস্তোরাঁয়) করেছিলেন। মার্কেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে বাথরুমে টাইলস বসানোর কাজ দেখতে যান তিনি। “দরজা খুলছে না-জানানোর পর ভাবি বললেন, দরজা ভেঙে ফেল। আমি স্কেল দিয়ে প্রথমে খোলার চেষ্টা করি। বলি, আমি দরজা ভাঙতে পারব না। এর মাঝে নাজু ভাইকে (মার্কেট সভাপতি) খবর দেই। পরে কম্পিউটার অপারেটর আসার পর দরজা খুলে দেখি উনি পড়ে আছেন।”
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৫:২০ ৩৭৭ বার পঠিত