বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
মামলাবাজ ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগকারী পুলিশের এক সিনিয়র এসএসপিকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করতে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন। অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. আলমগীর হোসেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরকারী কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর ৪(৩)(ডি) মোতাবেক চাকুরী হতে বরখাস্ত করতে মতামত প্রদান করা হয়। ২১ অক্টোবর বুধবার কর্ম কমিশনের মতামতের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে।
কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. শাহজাহান আলী মোল্লা স্বাক্ষরিত ওই পত্রে মতামত প্রদান করে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কমিশনের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, মো. আলমগীর হোসেন, সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, কুলাউড়া সার্কেল, মৌলভীবাজার বর্তমানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি -এর বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর ৩(এ) ও ৩(বি) বিধির আওতায় ও অসদাচরণ-এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার ৪(৩)(ডি) বিধি মোতাবেক ‘চাকুরী হতে বরখাস্ত’ দন্ড প্রদানের বিষয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের সাথে কমিশন একমত পোষণ করেছে। এমতাবস্থায়, কমিশনের মতামতের প্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করতে অনুরোধ করা হলো।
জানা যায়, প্রতারণাপূর্বক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় হয়রানি, শৃঙ্খলা পরিপন্থি গুরুতর অসদাচরণ, পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা, অনৈতিক স¤পর্কে জড়ানোসহ দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। পরে তা বিভাগীয় মামলার তদন্তে প্রমাণিত হয়। গত ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় অভিযুক্ত সিনিয়র এএসপি মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী ( শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৭(৬) এবং ৪(৩)(ডি) বিধি মোতাবেক চাকুরী হতে বরখাস্তের জন্য কর্মকমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন। এর প্রায় ৬ মাস পর ২১ অক্টোবর বুধবার কর্ম কমিশন সচিবালয় এই মতামত প্রদান করে।
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলমগীরের অপর মুল সহযোগি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা ডা. সৈয়দা রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে পূর্বেই বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে মো. সাইফুল ইসলাম সজীব নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হন এএসপি আলমগীর ও ডা. রাজিয়া সুলতানা, সেই ব্যবসায়ী সজীবকে এখনো বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যহত রেখেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এর পূর্বে আলমগীরের সাজানো মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছেন এই ব্যবসায়ী। বর্তমানে তিনি আলমগীরের অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দেয়াসহ নানা রকম হুমকি-ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ইতোমধ্যে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রাজধানীর রামপুরা থানায় ২টি জিডিও করেছেন।
জানা যায়, এএসপি আলমগীরের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ২টি এবং গত জানুয়ারি মাসে আরো একটিসহ মোট ৩টি অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার আসে। এর প্রেক্ষিতে আলমগীরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো আলাদা আলাদা তদন্ত শুরু হয়। গত ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম সজীব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (ডিএন্ডপিএস) ওমর ফারুক ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম গত ১৭ই জানুয়ারি ২০১৩ সালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালের আগস্ট সানে মো. সাইফুল ইসলাম সজীবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার সদরের জেপিএল ডোর অ্যান্ড ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজের শো-রুম থেকে বাকিতে মোটা অংঙ্কের টাকার ফার্নিচার কিনেন আলমগীর। টাকা পরিশোধ করেন এক বছর পর।এএসপি আলমগীরের বান্ধবী ডা. রাজিয়া সুলতানার মাধ্যমে আলমগীর ওই শো-রুম থেকে ফার্নিচার কিনেন। রাজিয়াও ওই একই সময়ে ২৭ লাখ ৮৫,৭০০ টাকার নগদ ও ফার্নিচার বাবদ টাকা ধার নেন। উভয়ে উক্ত টাকা পরিশোধ না করিয়া ব্যবসায়ী সজীবকে জিম্মাদার দেখাইয়া তার কোন প্রকার অনুমতি না নিয়া স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা লোনের আবেদন করেন। এ বিষয়টি ব্যবসায়ী সজীব জানতে পেরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে লোনের কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এবং তাদের উভয়কে তার সমুদয় পাওনা টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য তাগিদ দিলে তারা সজীবের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ কারণে কোন মামলা মোকাদ্দমা ব্যতিরেকে এএসপি আলমগীর কুলাউড়া হতে মাইক্রোবাস বাড়া করে আরো কতেক পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে ব্যবসায়ী সজীবের ঢাকার বনশ্রীর বাসা হইতে কিডনাপের মতো করিয়া উঠাইয়া মৌলভীবাজার মডেল থানায় নিয়া যান। এর মাত্র ৪৫ মিনিটের মাথায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও হত্যার উদ্দেশে মারধর ও ৯,৫০০ টাকা চুরির পৃথক তিনটি মামলা করেন। এর মধ্যে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি মামলার বাদী এএসপি আলমগীরে পরকিয়া বান্ধবী ডা. রাজিয়া সুলতানা ও অপর মামলার বাদী রাজিয়া ও আলমগীরে বন্ধু ডা. সোহেল রানা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডা. রাজিয়ার সঙ্গে অনৈতিক স¤পর্ক থাকায় আলমগীর সহযোগী হয়ে সাজানো মামলা তৈরি করেন। কোন মামলার সঠিক তদন্ত না করে থানায় বসে রিপোর্ট তৈরি করা হয়। আলমগীরের নির্দেশনায় থানায় ধর্ষণ মামলার এজাহার লিখা হয়। রাজিয়া শুধু তাতে দস্তখত করেন। সেখানে বলা হয়, রাজিয়ার সাথে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তদন্ত দলের অনুসন্ধানে তা সঠিক প্রমাণিত হয়নি। যা ছিল এএসপি আলমগীর ও ডা. রাজিয়ার তৈরি করা সাজানো নাটক। ওই মামলার পর বাদিনীর ডাক্তারী পরীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি। পুলিশি তদন্তে আলমগীর-রাজিয়ার স¤পর্ককে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে বাদিনীকে নিয়ে অভিযোগকারীর বাসায় রাত্রিযাপন অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যক্রম করে অনাকাঙিক্ষত ঘটনার সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আলমগীরের সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের (এসআই) আব্দুল লতিফ তরফদার(এসআই) বদরুল হাসান,(র্বতমানে অ সি তদন্ত কমল্গঞ্জ থানা) (এস আই)আব্দুল্লাহ আল হাসান,(এস আই)নজরুল ইসলাম, মামলা তদন্তে চরম অবহেলা ও গাফিলতির কথাও বলা হয়।
। এদিকে ডা. রাজিয়ার বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় সজীবের দায়ের করা গাড়ি, নগদ টাকা পয়সা ও বাকীতে ফার্নিচার ক্রয় করে টাকা আত্মসাৎ মামলায় ২ মাস জেল খেটে জামিনে বের হন গত ৭ই এপ্রিল ২০১৩ সালে। এর আগে তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখা-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব জনাবা হাসিনা বেগমের স্বাক্ষরিত গত ২২/০৮/২০১৩ ইং তারিখের স্বারক নং ৪৫.১৫১.০২৭.০০.০০.১২৩.২০১৩.৩৫২ মূলে ডাঃ রাজিয়া সুলতানাকে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩(বি) ও (সি) পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম সজীব জানান, মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালত সব কিছু পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যে একটি মামলা থেকে স্ব-সম্মানে অব্যাহতি দিয়েছেন এবং বাকী মামলা মহামান্য হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ রয়েছে। কিন্তু আলমগীর তার পিছু ছাড়ছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:২৮ ৬৪৬ বার পঠিত