বঙ্গনিউজ ডটকমঃ আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চান? তাহলে আপনাকে অনেক কাঠখড় পেরিয়ে বিদ্যুৎ পেতে হবে। বিদ্যুতের সংযোগ পেতেই গড়ে ১ বছর ২ মাস ৪ দিন সময় লাগবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগের আবেদন করার পর ডিমান্ড নোটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে গড়ে ২৭৭ দিন। সব মিলিয়ে নয়টি ধাপ পেরিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ মিলবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার পরিবেশ-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০১৬’-এ বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়ার সূচকে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯ দেশের মধ্যে ১৮৯তম। অর্থাৎ ব্যবসা করতে উদ্যোক্তাদের বিদ্যুৎ-সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। সূচকগুলো হলো ব্যবসায় শুরু, নির্মাণকাজের অনুমতি-প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ-সংযোগ প্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ছোট বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা, ঋণ প্রাপ্তি, কর পরিশোধ, বহির্বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করা।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের জন্য তেমন সুখবর নেই। কোনো সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অগ্রগতি হয়নি, বরং অর্ধেক (পাঁচটি) সূচকেই অবস্থান আগের চেয়ে নেমেছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯ দেশের মধ্যে ১৭৪তম। তবে পয়েন্ট গতবারের চেয়ে বেশি। এর মানে হলো, অন্য দেশগুলো ব্যবসায় পরিবেশ যেভাবে উন্নতি করেছে, বাংলাদেশ সেভাবে পারেনি। এ প্রতিবেদনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বিবেচনায় আনা হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হলে তো বেশ বিপাকেই পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। বিশ্বব্যাংক বলছে, বিরোধ নিয়ে মামলা হলে তা নিষ্পত্তি হতে গড়ে ৩ বছর ১১ মাস ১২ দিন সময় লাগে। তাই ব্যবসা-সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতাও বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাধা বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯ দেশের মধ্যে ১৮৮তম।
জমির নিবন্ধন পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাও এ দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অন্যতম কঠিন বিষয়। জমিসহ সম্পত্তির দলিলাদি যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন পর্যন্ত গড়ে সময় লাগে ২৪৪ দিন। এসব কাজ করতে আটটি ধাপ পেরোতে হয় ব্যবসায়ীদের। নিবন্ধন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সম্পত্তির মূল্যের ৭ শতাংশের সমপরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়। এ সূচকেও অন্য দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর এক ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫তম।
শুধু জমি কিনলেই ব্যবসা শুরু করা যায় না, সেখানে কারখানা ভবন, পয়োনিষ্কাশন সংযোগসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু তাতেও বিপত্তি। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এসব নির্মাণকাজের অনুমতি পেতেই গড়ে ২৬৯ দিন সময় ব্যয় করতে হয়। ১৩ জায়গায় ধরনা দিয়ে হয়।
এদিকে প্রাথমিকভাবে ব্যবসা শুরুর আনুষঙ্গিকতা শেষ করতে সময় লাগে সাড়ে ১৯ দিন। প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত নাম যাচাই-বাছাই, নাম নিবন্ধন, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স নিতে এ সময় লাগে। তবে মূসক নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স নিতেই ৭ দিন করে ১৪ দিন সময় লাগে। ব্যবসা শুরুর এসব প্রক্রিয়া ৯ ধাপে হয়। ব্যবসা শুরু করার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭তম।
ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে একজন ব্যবসায়ীকে মুনাফার গড়ে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়। প্রতিবছর করপোরেট কর, মূসক, পৌর কর, জমির খাজনা, গাড়ির করসহ মোট আট ধরনের কর দেন ব্যবসায়ীরা। এসব কর আদায় করা হয় ২১ ধাপে। সুখবর হলো, ১০টি সূচকের মধ্যে কর পরিশোধের সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে ভালো। আর দক্ষিণ এশিয়ার বড় দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা বেশি ব্যবসায় সহায়ক। কর পরিশোধের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬তম। আর ভারত ১৫৭, শ্রীলঙ্কা ১৫৮ ও পাকিস্তান ১৭১তম স্থানে রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ ১১৩তম স্থানে রয়েছে। ভারত ৪২তম স্থানে। বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৭০টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করার জন্য ঋণ নিয়েছে। আর ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩১ জন ব্যক্তি ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। ঋণপ্রক্রিয়ায় দাতা ও গ্রহীতার আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার ভিত্তি শক্তিশালী। তবে ঋণের পর্যাপ্ত তথ্য পান না উদ্যোক্তারা।
বহির্বাণিজ্য সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি, ১৭২তম স্থানে রয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ব্যবসায়ীর গন্তব্যে পণ্য আনতে গড়ে সাড়ে ১৪ দিন সময় লাগে। রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে কারখানা থেকে বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে লাগে ১১ দিন।
একই ব্যবসায় ছোট ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ পিছিয়ে ৮৮তম। তবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই অবস্থান কিছুটা ভালো।
এ ছাড়া ব্যবসায়ীর আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করার সূচকে ১৫৫তম স্থানে বাংলাদেশ। এ সূচকেও অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৯:৫১ ৪৮৫ বার পঠিত