বঙ্গনিউজ ডটকমঃ মোহাম্মদ রফিকের প্রথম গোলে ২-০ করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। শেখ কামাল ক্লাব কাপে কাল অতিথি দলটি ফাইনালে উঠে গেছে ঢাকা মোহামেডানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে l শামসুল হকএ কোন মোহামেডান!মাঠের বাইরে যেমন, মাঠেও তাদের শোচনীয় অবস্থা। চোট আর অসুস্থতায় জর্জরিত দলটি ইস্টবেঙ্গলের সামনে ছিল অসহায়। স্কোরলাইনেও সেটিরই প্রতিফলন। ঢাকা মোহামেডানকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে শেখ কামাল টুর্নামেন্টের ফাইনালে সহজেই উঠে গেল কলকাতার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। সেটিও দলের সেরা খেলোয়াড় ডু ডংকে বাইরে রেখেই। কোরিয়ান তরুণ পুরো ফিট না হওয়ায় তাঁকে দলেই রাখেননি কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।
আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু চট্টগ্রাম আবাহনী-ইস্টবেঙ্গল ফাইনাল ম্যাচটা নিয়ে আসছে ভিন্ন আকর্ষণ। গ্রুপ পর্বে ইস্টবেঙ্গলের কাছে ২-১ গোলে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগও দুই বাংলার ফাইনাল। অনেকে চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে ফাইনালে মোহামেডানকে চাইলেও ঢাকার দলটি সেই সামর্থ্যই হারিয়ে ফেলেছিল।
ম্যাচ শেষে হতাশ মোহামেডানের প্রতীক তিন ফুটবলারের এই ছবি l প্রথম আলোদুপুরে টিম হোটেলে অস্থির পায়চারি করছিলেন কোচ জসিমউদ্দিন জোসি। কপালে চিন্তার ভাঁজ। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এই মোহামেডান পারবে না। ১১ জন ফিট খেলোয়াড় মাঠে নামানো যায় কি না, তা নিয়েই কোচ পড়ে গিয়েছিলেন শঙ্কায়। শেষ পর্যন্ত মোবারক আর জীবনকে খেলালেন জ্বর নিয়েই। ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে জন্ডিস ধরা পড়ে ইব্রাহিমের। তার আগে একে একে ঝরে যান জন্ডিস-আক্রান্ত জুয়েল রানা, চোখের সমস্যায় বিপলু, মাথায় ১২টি সেলাই পড়া সোহেল রানা।
এমন ভাঙাচোরা দল নিয়ে মাঠে নেমেই মোহামেডান নিষ্প্রভ, খেলোয়াড়দের শরীর যেন চলছিল না। শেষ সময়ে ইব্রাহিমও ছিটকে যাওয়ায় দলের ক্ষতিটা হয়েছে অনেক বেশি। দুই উইংয়ে মোবারক আর ফয়সাল মাহমুদ সেরাটা দিতে পারছিলেন না শারীরিক দুর্বলতায়।
তারপরও শুরুতে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করলেন স্ট্রাইকার জীবন। তাঁর হেড চলে যায় বাইরে। আরেকবার বাইরে মারলেন বল। নিজেরা গোল পায়নি, উল্টো ১০ মিনিটে প্রতিপক্ষকে গোল উপহার দিয়েছে। ডান প্রান্ত থেকে অবিনাশের ক্রসে বলের ওপর যান গোলরক্ষক আশরাফুল রানা, কিন্তু রানা বল পাওয়ার আগেই অহেতুক পা লাগিয়ে দেন স্টপার মিন্টু শেখ। বিপদ আসে তাতেই। মোহামেডানের গোলমুখ খুলে যায়, নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার র্যান্টি মার্টিনস ফাঁকা পোস্টে আলতো করে বলটা জালে পাঠান।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলে ইস্টবেঙ্গল। মোহামেডান ডিফেন্ডার ইয়ন্তা মিশেলের পা থেকে বলটা কেড়ে নিয়ে প্লেস করেন মোহাম্মদ রফিক। ৫৯ মিনিটে প্রহ্লাদ রায়ের বক্সে তুলে দেওয়া ক্রস ফাঁকায় দাঁড়ানো র্যান্টি মার্টিনস হেডে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটি করেন (৩-০)। ম্যাচটা তখনই পকেটে ঢুকে যায় ইস্টবেঙ্গলের। শেষ দিকে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা মোহামেডান যে আরও গোল খায়নি, সেটাই তাদের ভাগ্য।
ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি খেলোয়াড়দের মান মোহামেডানের বিদেশিদের চেয়ে অনেক ভালো। দলটির খেলাও গোছানো। সেটি মেনে নিয়েও এমন বিব্রতকর হারে কোচ জোসি হতাশ, ‘একাদশের পাঁচ-ছয়জন খেলোয়াড়কে ছাড়াই এত বড় ম্যাচ খেলা ভীষণ কঠিন। তবে এতটা খারাপ খেলব ভাবিনি। ক্লান্তির কাছেও আমরা মার খেয়েছি।’ বলতে ভুললেন না, ‘ইস্টবেঙ্গলের খেলার মান আমাদের চেয়ে ভালো।’
মোহামেডান চোটাঘাতে বিধ্বস্ত ছিল জেনে ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমরাও তো ১৪ জন খেলোয়াড় ছাড়াই এসেছি। তবে সত্যিটা হলো, পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা খেলতে পেরেছি।’ ঠিকই বলেছেন বিশ্বজিৎ, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই ম্যাচটা সহজেই বের করে ১৯ বছর আগের হারের বদলা নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। সেমিফাইনালটা তাই জমেনি একটু।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৭:৫৯ ৩৮৬ বার পঠিত