০৮/০৬/১৪ইং
উত্তরার একটি আধুনিক মেডিকেলে আজ সকালে ১০ বছরের একটি মেয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। মেয়েটি এবার ট্যালেন্টপুলেন্ট বৃত্তি পেয়ে ঢাকা বোর্ডে ১ম স্থান অধিকার করেছে। মেয়েটির নাম আসমা। তার বাবা একজন দরিদ্র রিক্স্ চালক। ডাক্তার তার মেয়ের মেধার কথা শুণে ফ্রি চিকিৎসা দিবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু অনেক পরীক্ষা করে জানা গেল আসমার হার্টটি ছিদ্র হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে বাঁচাতে গেলে একটি হার্ট দরকার। কিন্তু বিভিন্ন হার্ট ফাউন্ডডেশনে যোগাযোগ করে একটি সুস্থ র্হাট যোগার করতে পারলানা। আর আসমার পিতার যে আর্থিক অবস্থা তাতে নতুন একটি হার্ট ক্রয় করাও সম্ভব নয়। হার্টের খোঁজে যতই দিন যাচ্ছে ততই আসমা অসুস্থ হয়ে পরছে। আর তার মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে। আসমার পিতা তার মেয়ের শারিরিক অবস্থা দেখে কাদছে আর ডাক্তারদের হাত পা ধরে তার মেয়ের প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। যদিও ডাক্তাররা মেয়েটিকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তবুও বাবার মন কোন শান্তনা যেন মানছেনা। অপেক্ষা আর দুখের পর হঠাৎ হার্ট ফাউন্ডডেশনে একটি হার্টের সন্ধান পাওয়া গেল। ডাক্তার অতি আনন্দ নিয়ে আসমার বাবাকে সুসংবাদটি দিয়ে বলল আপনার মেয়েকে আমরা বাঁচাতে পারব। আগামীকাল আমরা সকালের মধ্যেই অপারেশন করব।
ডাক্তার হার্ট ফাউন্ডডেশনে যোগাযোগ করল হার্টটি আনার জন্য। এরমধ্যে ডাক্তারকে মেডিকেলের কতৃপক্ষ জরুরি সংবাদে ডেকে পাঠাল। কতৃপক্ষ ডাক্তারকে বলল যে হার্টটি পাওয়া গেছে সেটি যেন কোন ভাবেই গরিব মেয়েটিকে দেওয়া না হয়। কারণ কিছুক্ষণ আগে মেডিকেলে একটি রুগি এসেছে অনেক ধনাঢ্য ব্যাক্তি। বয়স সত্তরের ঘরে। তার হার্টটিও নষ্ট হয়েছে। হার্ট ফাউন্ডডেশনে যে হার্টটি পাওয়া গেছে যেটি এই ধনাঢ্য ব্যাক্তিকে দেওয়া হবে বলে মেডিকেল কতৃপক্ষ সিধান্ত নিয়েছেন। কারণ তারা হার্টের মূল্য ছাড়াও দুই কোটি টাকা মেডিকেলের তহবিলে দান করবেন। ডাক্তার কতৃপক্ষের সব সিধান্তকে উপেক্ষা করে আসমা নামের মেধাবী মেয়েটিকে বাচাতেই অনড় রইলেন। ডাক্তারের কথাশুনে রোগীর আত্বীয় স্ত্রী আর শ্যলক ডাক্তারের পা ধরে অনেক কাকুতী মিনতি করলে অবশেষে ডাক্তার সিধান্ত পরিবর্তন করল। আগামীকাল আসমার অপারেশন হবেনা হবে সত্তর বছরের বৃদ্ধের।
আসমার বাবা এই খবর শুণে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল আপনাদের কাছে টাকাই বড় বিবেক মনুষত্য কিছুই না।
ডাক্তার লজ্জায় আসমার বাবাকে আর সান্তনা দিতে পারলানা। আসমার বাবা পাগলের মত অনেক প্রলব বকতে বকতে কাদতে লাগল।
পরের দিন সকালে রোগীর শ্যলককে হার্ট ফাউন্ডডেশনে পাঠিয়ে হার্টটি আনতে আর বৃদ্ধকে আই.সি.ইউতে নিয়ে অপেক্ষা করছে। সময় অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু হার্ট এখনও আসছেনা। রোগীর অবস্থাও খারাপ। হঠাৎ রোগীর স্ত্রীর কাছে ফোন এল। হার্টনিয়ে আসার পথে হার্টটি কিডন্যাপ হয়েছে। কিডন্যাপার চক্র মুক্তি পন হিসাবে নগদ ২০ কোটি টাকাও স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি চাইছে। রোগীর স্ত্রী খবরটি শুশে বেশ দিশেহারা হয়ে পরেছেন। পাগলের মত হয়ে পরেছেন। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেনা। সে তার মৃত্যশয্যা স্বামীকে বলে “আমার কাছে তুমিই সবচেয়ে দামী,তোমাকে বাচাতে গেলে হার্টটি অতি প্রয়োজন।তুমি বেচে থাকলে আবার আমরা সব সম্পত্তি করতে পারব।তুমি এই স্ট্যাম্পে সই করে দাও। আমি সম্পত্তির সব দলিল দিয়ে আমার ভাইকে আর হার্টটি নিয়ে আসছি”
স্বামী স্ত্রীর কথা মত দলিলে সই করে দিল। স্ত্রী চোখ মুছতে মুছতে ডাক্তারকে অপারেশন আরম্ব করতে বলে দলিল নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেল কিডন্যাপারের কাছ থেকে হার্টটি আনার জন্য।
একটু একটু করে সময় পার হচ্ছে। সকাল গড়িয়ে বিকেলের কোলে গিয়ে ঠাই করে নিল। তবুও রোগীর আত্বীয়দের কোন খবর নাই। বৃদ্ধ রোগী ইতিমধ্যে পরলোক গমন করেছেন। ডাক্তার বিকেলের শেষে রোগীর ঠিকানা নিয়ে তার বাসায় গেল। গিয়ে দেয়ে রোগীর স্ত্রী ও তার ভাই হার্টটি ফ্লোরে ফেলে রেখে স্বামীর অর্থ ভাগাভাগি করছে। কারণ তার স্বামীর সে দ্বিতীয় পক্ষ। আর এই জন্যই সে এই নাটকটি করে স্বামীর কাছ থেকে সব সম্পত্তি আদায় করেছে। চোখের সামনে যখন ডাক্তারকে দেখতে পেল তখন রোগীর শ্যলক ডাক্তারকে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করতেই সে আঘাত গিয়ে লাগল তার বোনের মাথায়। জায়গাতেই মৃত্যু হয় তার। ভাই ঐ অবস্থাতেই সয় সম্পত্তি রেখে পালিয়ে যায়। দুদিন পর ডাক্তার আসমার অপারেশন করে সুস্থ করে। আসমার বাবা ডাক্তাররের পায়ে ধরে ধন্যবাদ জানালেন আর বললেল কে আমার মেয়েকে হার্টদিল আমি তার জন্য সারাজিবন মন ভরে দোয়া করব।
ডাক্তার একটুমুচকি হেসে বলল ” যে আপনার মেয়ের অপারেশনের আগের দিন হার্টটা কিনে নিয়েছিল সেই তার শরীরের হার্টটি দান করেছে। মানুষ হিসাবে যতই খারাপ হোক কিন্তু তার হার্টটি একদম ঠিকছিল। ঠিক বললামতো!
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৩:৩৩ ৪১০ বার পঠিত