বঙ্গনিউজ ডটকমঃ সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্বে ইরাকে সামরিক অভিযান চালানোর সময় যেসব ‘ভুল’ হয়েছিল, তার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওই যুদ্ধের পরিণামেই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান হয় বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে প্রয়াত ইরাকি স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত নন। খবর এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ব্লেয়ার এসব কথা বলেন। এটি গতকাল রোববার সম্প্রচার করা হয়। এতে ব্লেয়ার বলেন, ‘যে গোয়েন্দা তথ্য আমরা পেয়েছিলাম, তা ভুল ছিল। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি (সাদ্দাম) নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলেও সেটার মাত্রা আমরা যে রকম ভেবেছিলাম, ঠিক সে রকম ছিল না।’
সাদ্দাম সরকারের কাছে গণবিধ্বংসী মারাত্মক অস্ত্র ছিল-এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ সরকার ইরাকে হামলা চালানোর ঘটনাটিকে ন্যায়সংগত করতে চেয়েছিল। কিন্তু যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই সামরিক অভিযান চালানো হয়, সেটা পরবর্তী সময়ে ভুল প্রমাণিত হয়। সাদ্দাম সরকারের পতনের পর ইরাক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয় এবং পরবর্তী কয়েক বছর দেশটিতে জাতিগত সহিংসতা ভয়াবহ আকারে বেড়ে যায়। পাশাপাশি উত্থান ঘটে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ও আইএসের। লাখো ইরাকির সঙ্গে নিহত হয় অন্তত চার হাজার মার্কিন এবং ১৭৯ জন ব্রিটিশ সেনা। ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে জোরালো সমর্থন দেন টনি ব্লেয়ার। এ কারণে তিনি নিজ দেশে ব্যাপক সমালোচিতও হন।ইরাকের ওই যুদ্ধই আইএসের উত্থানের কারণ কি না, প্রশ্ন করা হলে ব্লেয়ার বলেন, এমন দাবির পক্ষে ‘সত্যের উপাদান’ রয়েছে। যারা ২০০৩ সালে সাদ্দামকে উৎখাত করেছিল, ২০১৫ সালে ইরাক পরিস্থিতির কোনো দায় তাদের নেই-এমনটা বলা যায় না। তা ছাড়া আইএস এসেছে মূলত সিরিয়া থেকে, ইরাক থেকে নয়।
তবে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন ইরাক যুদ্ধের কিছু পরিকল্পনায় বিশেষ করে, সেখানকার সরকার উৎখাত করার পরবর্তী পরিস্থিতি বোঝার ব্যাপারে, তাঁদের ভুল হয়েছিল।
ইরাকে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে ব্লেয়ারকে কেউ কেউ ‘যুদ্ধাপরাধীর’ তকমা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে অনুভূতি জানতে চাইলে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় তিনি যা সঠিক মনে করেছিলেন, তাই করেছেন। এখন সেটা ঠিক ছিল কি না-প্রত্যেকের নিজস্ব বিবেচনা থাকতে পারে।
ব্লেয়ারের একজন মুখপাত্র ওই সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে গার্ডিয়ানকেবলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার ইরাক যুদ্ধে ভুল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করার বিষয়ে বরাবরই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি এটাও অনেকবার বলেছেন যে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা কোনো ভুল ছিল না।
ইরাকের ওই যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখার ভিত্তিতে জন চিলকটের নেতৃত্বে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তদন্ত চলছে। তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেরি হওয়ায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ইরাক যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সেনাদের স্বজনেরা চিলকটের প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখ শিগগির নির্ধারিত না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে ওই তদন্তকাজ শুরু হয়। এটি কবে শেষ হবে, তা জানিয়ে চিলকট আগামী ৩ নভেম্বর বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে চিঠি লিখবেন।
২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন লর্ড ব্লাংকেট। তিনি গতকাল ডেইলি মেইলকেবলেছেন, ইরাকে পশ্চিমা সামরিক অভিযানের ব্যাপারে ব্লেয়ার বিশেষ কিছু জানতেন না। তিনি কেবল মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের ওপর আস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে
বাংলাদেশ সময়: ১১:১১:৩৯ ৩৯৭ বার পঠিত