বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃমিজানুর রহমান তোতা : মাঠে মাঠে এখন সোনালী ছোপ। আর ক’দিন বাদেই কৃষক ঘরে তুলতে পারবে রোপা আমন ধান। মাঠের চেহারা বলে দিচ্ছে ফলন ভালো হবে। কৃষি কর্মকর্তারাও তেমনি আশা করছেন। মাঠের ধান দেখে কৃষকরা খুবই খুশি। তাদের চোখ মনও ভরে উঠছে। কিন্তু উপযুক্ত ও ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে। কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন নি। এমনকি অনেকেরই উৎপাদন খরচ ওঠেনি। পাটের মূল্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সোনালী আঁশ পাট নিয়ে সোনালী স্বপ্নপূরণ হয়নি। সবজির ক্ষেত্রেও মন ভরলেও পেট ভরছে না চাষীদের। এই চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। সরকারকে সকল কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে কৃষি বিশেষজ্ঞ, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকের বক্তব্য বিভিন্ন সময় প্রকাশ হলেও বাস্তবে সাধারণ কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না। দিনরাত পরিশ্রম করছে কৃষক আর বাজার ব্যবস্থপনার দুর্বলতায় ফড়িয়া, পাইকার, মজুদদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা পেট মোটা করছে।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কোথাও কোথাও আগাম আবাদেও ধান কাটা শুরু হয়েছে। একপক্ষকালের মধ্যে মাঠ থেকে সব ধান কৃষকের ঘরে উঠবে। বর্তমান রোপা আমন ধানের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা প্রচ- আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, থোড়, দুধ ও ফুল হয়ে গেছে সব ধানে। এখন পুরোপুরি পাকার অপেক্ষায়। বর্তমান আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হবে। কৃষকরা এই মুহূর্তে মাঠের দিকে দৃষ্টি রাখছেন দিনের বেশিরভাগ সময়। মাঠে রোপা আমন ধানের পরিস্থিতি দেখার সময় মাঠে কর্মরত কৃষক যশোরের ছুটিপুর এলাকার আজমত আলী জানান, যাতে ধানের উপযুক্ত ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে। তিনি বললেন, এবার পাট ও বোরো ধানের দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ। তাদের মন ভেঙ্গে গেছে। তার প্রশ্ন দিনরাত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের যদি আশানুরূপ দাম না পাওয়া যায়, তাহলে তারা পরবর্তী আবাদ খরচ উঠাবে কিভাবে? যশোরের বারীনগর, ঝিনাইদহের চরমুরারীদহ, ভড়–য়াপাড়া, লাউদিয়া, ভাটই, শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ, শেখপাড়া ও মাগুরার শালিখাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কথা, এবার কোনভাবেই যাতে কৃষকদের নানা প্রয়োজন মিটাতে তড়িঘড়ি ধান বিক্রির সুযোগ না নিতে পারে মজুদদার, আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা, সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগেভাগেই তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে মাঠে মারা পড়বে কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় এবার প্রায় ১৮লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে উফসী ও স্থানীয় জাতের রোপা আমন আবাদ হয় ৭লাখ ২৩হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে আবাদ হয়েছে কোন কোন এলাকায়। এ অঞ্চলের কয়েকজন উপ পরিচালক জানান, সময়মতো বৃষ্টি ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে বিশেষ করে মাজরা পোকা দমনে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা বিরাট সফল হয়েছেন। মনিরামপুরসহ কয়েকস্থানে কিছু জমিতে অবশ্য ব্যাকটেরিয়াল লীফ ব্লাইট রোগ দেখা যায়। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে ওই রোগ দমন করা হয়। ধান উঠার পর কৃষকরা যে দুশ্চিন্তা করছেন মূল্য নিয়ে, সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজর দেয়া জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৯:৪৯ ৪৮১ বার পঠিত