টেলিযোগাযোগ খাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » টেলিযোগাযোগ খাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা
রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির অধিকাংশ ক্ষমতাই চলে যাচ্ছে নবগঠিত টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের হাতে। মূলত সাবেক বিটিটিবি এবং বর্তমান বিটিসিএলের টেলিকম ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের জন্য টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠিত হলেও প্রস্তাবিত কার্যপত্রে টেলিযোগাযোগ খাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু করা হচ্ছে এই অধিদপ্তরকে।বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে টেলিযোগাযোগ খাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়বে এবং সৃষ্টি হবে দীর্ঘসূত্রতার। বিশেষ করে বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা ও মোবাইল ফোন সেবা কার্যক্রমের মান নিয়ন্ত্রণ এবং সেবা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিদপ্তরকে ক্ষমতা দেওয়ার ফলে বিটিআরসি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে, বিশৃঙ্খলা বাড়বে পুরো টেলিযোগাযোগ খাতেই। অবশ্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সমকালকে বলেছেন, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং বিটিআরসির দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট থাকবে। পেশাগতভাবে সৎ ও দক্ষদের দিয়ে অধিদপ্তর গঠন করা হবে।

যেসব ক্ষমতা পাচ্ছে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর :সংশ্লিস্ট নথিপত্র অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিদপ্তরে মোবাইল ফোন সেবা সমন্বয়, মান নিয়ন্ত্রণ, মোবাইল ফোন কোম্পানি সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় আর্ন্তজাতিক চুক্তি সম্পাদনসহ সবগুলো কাজের জন্য পরিচালক থেকে সহকারী পরিচালক মর্যাদার ৯ কর্মকর্তা থাকবেন। একইভাবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সংক্রান্ত বিষয়, বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং রেগুলেটরি কার্যক্রমের জন্যও একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা থাকবেন। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে, ইন্টারনেট গেটওয়ে, পিএসটিএন এবং ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তাসহ টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে অধিদপ্তরের কাছে।

সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর পুরোমাত্রায় কাজ শুরুর পর মোবাইল ফোন সেবাসহ টেলিযোগাযোগ খাতের সেবা, লাইসেন্সিং এবং তরঙ্গ বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যে কোনো ক্ষেত্রে বিটিআরসির কাছে প্রস্তাব বা আবেদন আসার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর চূড়ান্ত মতামত দেওয়ার পর সেটি আবারও মন্ত্রণালয় হয়ে বিটিআরসির কাছে গেলে বিটিআরসি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বর্তমানে বিটিসিএলের ৩২ কর্মকর্তাকে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে নিয়ে এসে প্রাথমিকভাবে তেজগাঁওয়ে বিটিসিএলের আঞ্চলিক কার্যালয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অধিদপ্তর পুরো কার্যক্রম শুরু করেনি। এখন কর্মকর্তারা অধিদপ্তরের কাজের কাঠামোগত দিক প্রস্তুত করছেন। গত ১২ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত টেলিযোগাযোগহ অধিদপ্তরে সৃজন সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবে সাবেক টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ বোর্ড, বিটিটিবির ২২ হাজার ৪৫৫টি পদের মধ্যে ৭ হাজার ৮১১টি পদ রেখে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী পদ হবে ২৫৫টি। স্থায়ী পদ ছাড়া অন্য পদগুলো পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ, ওইসব পদের কেউ অবসরে গেলে সেখানে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে না।

বিটিআরসি গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে :বর্তমানে টেলিযোগাযোগ খাতে মোবাইল ফোন সেবাসহ সেবার মান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পুরো বিষয়টি তদারক করে বিটিআরসি। পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ খাতের লাইসেন্স প্রদান, বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আদায়ের কাজও করছে বিটিআরসি।

টেলিযাগাযোগ অধিদপ্তরের কাছে সব ক্ষমতা চলে গেলে বিটিআরসি হয়ে যাবে শুধু প্রস্তাব ও আবেদন গ্রহণ এবং নির্দেশনা জারির একটি প্রতিষ্ঠান। ফলে এর গুরুত্ব আর থাকছে না।

এ ব্যাপারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান সমকালকে বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে তরঙ্গ ব্যবস্থাপনায় বিটিআরসি গত এক যুগের বেশি সময় ধরে দক্ষতা অর্জন করেছে। সেখানে এর আগে সেবাদানের ক্ষেত্রে ব্যর্থ বর্তমান বিটিসিএল এবং সাবেক বিটিটিবির কর্মকর্তাদের দিয়ে গঠিত অধিদপ্তর বেতার তরঙ্গ ব্যবস্থাপনার মতো কাজটি দক্ষভাবে করতে পারবে না এবং এ নিয়ে নতুন সংকটের সৃষ্টি হবে। তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নতুন স্তর সৃষ্টি হওয়ার ফলে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হবে।

প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার সমকালকে বলেন, স্বাধীন বিটিআরসি গঠনই ছিল ১৯৯৮ সালের টেলিযোগাযোগ নীতিমালা এবং ২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ আইনের অন্যতম লক্ষ্য। ২০১২ সাল থেকে ক্ষমতা বিটিআরসির হাত থেকে কড়ে নিয়ে এটিকে মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছা বাস্তবায়নের একটি সিলমোহর প্রদান করা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। একই সঙ্গে উপযুক্ত ও দক্ষ ব্যক্তিদের কমিশনার নিয়োগ করে বিটিআরসি গঠন করা হয়নি। এখন বিটিআরসিকে নিষ্ক্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিটিটিবি কিংবা বিটিসিলের ইতিহাসই হচ্ছে অনিয়ম, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার। তার মতে, সেখানকার কর্মকর্তাদের দিয়ে স্বচ্ছ ও দক্ষ টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য:  ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সমকালকে বলেন, অধিদপ্তরে কোনো কালো দাগ লাগতে দেওয়া হবে না। টেলিকম ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এখানে নিয়োগর বাধ্যবাধ্যকতা থাকায় তাদের প্রথম পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সাইবার নিরাপত্তাসহ সেবার বিভিন্ন বিষয়ে তরুণ মেধাবীদের দিয়ে একটি দক্ষ ব্যবস্থাপনা দল গঠন করা হবে। প্রয়োজনে তাদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে পরে স্থায়ী করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিটিসিএলের যারা দক্ষ, সৎ তাদেরই বেছে বেছে নিয়োগ দেওয়া হবে। যাদের ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে তাদের এখানে স্থান হবে না। অভিযোগ থাকায় উচ্চপর্যায়ের একজনকে অধিদপ্তরে নিয়োগ দেওয়ার পর বদলি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিটিআরসি ও অধিদপ্তরের কাজ সুনির্দিষ্ট থাকবে। কারও কাজে যেন কেউ হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হবে। বিটিআরসি আরও কার্যকর করার জন্য তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেও জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৩:২৮   ৩১৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ