.
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২ দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বাংলাদেশের ওষুধশিল্প মালিক এবং এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
টিপিপিতে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সুরক্ষা এবং বিশ্বজুড়ে তাদের বাণিজ্যের শক্তিশালী অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশেষ করে বায়োলজিক্যাল বা জীববিজ্ঞান–সংক্রান্ত ড্রাগস বা ওষুধের ব্যবসা সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে রয়েছে ক্যানসারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ।
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্রে যতটুকু জানা গেছে, তাতে টিপিপির শর্ত অনুযায়ী, যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বহুজাতিক কোম্পানি বায়োলজিক্যাল ওষুধ উদ্ভাবন করে, সে ক্ষেত্রে ওই ওষুধ বাজারজাত হওয়ার পর দীর্ঘ মেয়াদে তার পেটেন্ট–সুবিধা সংরক্ষিত থাকবে ওই কোম্পানির। এ সময়ে যদি চুক্তিবদ্ধ দেশের কোনো কোম্পানি ওই ওষুধ তৈরি করতে চায়, তাহলে পেটেন্ট অধিকারভুক্ত কোম্পানির কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে স্বত্ব কিনতে হবে। সেটি করা হলে এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
টিপিপির এমন শর্ত নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও এ নিয়ে বিরোধিতা রয়েছে। কারণ, চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বজুড়ে ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে।
টিপিপি চুক্তি ও ওষুধ খাতের জন্য কঠিন শর্ত নিয়ে এই যখন বিশ্ব প্রেক্ষাপট, তখন এসব নিয়ে এ মুহূর্তে উদ্বিগ্ন নয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ওষুধশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এই অভিমত পাওয়া গেছে। তাঁরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অধীনে ট্রিপসের (বাণিজ্য–সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব চুক্তি) আওতায় ওষুধ উৎপাদন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা বলবৎ রয়েছে বাংলাদেশের। আর এরই মধ্যে নতুন করে এ সুবিধার মেয়াদ বাড়াতে আবেদনও করা হয়েছে।
দেশীয় একাধিক ওষুধশিল্প মালিক জানিয়েছেন, এলডিসি দেশ হিসেবে ট্রিপসের আওতায় বাংলাদেশের ওষুধ তৈরির সুবিধার মেয়াদ আরও বাড়বে। যত দিন বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত থাকবে, তত দিন যেন এ সুবিধা পাওয়া যায়, সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
বেক্সিমকো ফার্মার মহাব্যবস্থাপক শওকত হায়দার বলেন, ‘ট্রিপসের আওতায় বাংলাদেশ ওষুধ তৈরিতে জেনেরিক ভার্সন সুবিধা ভোগ করে। এর ফলে পেটেন্ট স্বত্ব বাবদ কাউকে কোনো অর্থ দিতে হয় না। এ সুবিধা আমরা আরও বেশ কয়েক বছর পাব।’
ইনসেপটা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির বলেন, ‘এমনিতেই আমরা ট্রিপসের আওতায় যে সুবিধা পেয়ে থাকি, তা সহসা যাবে না। তাই টিপিপি নিয়ে এ মুহূর্তে আমাদের উদ্বেগের কিছু নেই। তারপরও টিপিপিতে অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে আমাদের প্রতিযোগী হওয়ার মতো দেশ ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া। কিন্তু তাদের চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া আমাদের পর্যায়ে আসতে সময় লাগবে।’
ওষুধশিল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওষুধের বাজারের মধ্যে প্রায় ১৮০ কোটি ডলারের পণ্যই বিক্রি হয় দেশের বাজারে। রপ্তানির পরিমাণ সাত থেকে আট কোটি ডলার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৭:২৮ ৩২১ বার পঠিত