বঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অন্তত ১৬ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের অন্তত ১৮ শতাংশই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। এ থেকে আত্মহত্যার প্রবণতাসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাড়ছে।
২০০৫ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য। আর, ২০০৯ সালে, শিশুদের নিয়ে করা, আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় ১৮ শতাংশই ভোগে মানসিক সমস্যায়।
এদিকে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাও অনেকটা না থাকার মতো, ৮ থেকে ১০ শতাংশ। অথচ সারা দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছে।
আবার মানসিক সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি ও অসচেতনতা। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়নের প্রস্তাবটি ঝুলে আছে ১৫ বছর ধরে। এমনই বাস্তবতায় শনিবার (১০ অক্টোবর) সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি হবে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত বিপুল এ জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও চিকিৎসা প্রাপ্তির তথ্যের অভাবে সময়মতো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিতত হচ্ছে। অনেক রোগী ভুল চিকিৎসায় মারাও গেছেন। এক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেতুলি। বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত আড্ডা আর খুনসুটিতে। ভার্চুয়াল এই আড্ডা তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে যৌথ পরিবারের পারিবারিক আড্ডা থেকে। ছোট সদস্যদের এই মিলন মেলায় কেউই, যেন, ঠিক কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারছে না। ইন্টারনেটের ওয়াইফাই কানেকশন, স্মার্ট ফোন, গ্যাজেট বা ল্যাপটপ সামনের মানুষটি থেকে আলাদা করে ফেলেছে তাদের।
ইন্টারনেট ছোটদের কাছে খেলার বিষয় হলেও, পূর্ণ বয়স্কদের কাছে তা সময় কাটানো আর আত্মপ্রচারণার বিষয়। টেবিলে পরিবারের সব সদস্য মিলে একসঙ্গে আন্তরিক পরিবেশে খাবার ভাগ্য মেলে কালে-ভদ্রে।
ব্যস্ত কর্মময় জীবন আর ভার্চুয়াল জগত ক্ষতিগ্রস্ত করছে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোনের আত্মিক সম্পর্কে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কমে আসায়, মানসিক রোগের সম্ভাবনা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে তা ভয়াবহ সন্দেহ-প্রবণতা থেকে শুরু করে কাছের মানুষটিকে খুনের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
এছাড়া, সুস্থ হয়ে উঠেও বছরের পর বছর ধরে পাবনা মানসিক হাসপাতালেই রয়ে গেছেন ২৩ জন । দশ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের আর ফিরিয়ে নেননি আত্মীয় স্বজনরা। অন্যদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার নিয়ম না থাকায় মুক্তিও পাচ্ছেন না এই হতভাগ্যরা।
অভিমানী । শুয়ে আছেন এই বেঞ্চেই । পাবনা মানসিক হাসপাতালের পেয়িং বেডের প্রায় স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। দশ বছর ধরে আছেন এখানে । ‘কোথায় যাবেন’ জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয় ,‘এখানেই থাকবো’।
হাসপাতালের সুপারেনন্ডেন্ট ডা: গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী জানান, ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে কিংবা পরিবার ফেরত নিতে না চাওয়ায় বাধ্য হয়েই তাদের হাসপাতালে রাখতে হচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক সমস্যাগ্রস্তদের প্রতি সমাজে মানুষের ভুল ধারণা ও খারাপ আচরণ দূর করতে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। এ ছাড়া তারা যাতে অপচিকিৎসার কবলে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারো মধ্যে মানসিক রোগের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত তাকে যেন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসা হয়, সে জন্য সচেতনতা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২০:২২ ৩৩৫ বার পঠিত