বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
মাঠে বিরোধীদলের কোন কর্মসূচি নেই। তবুও নাশকতার অভিযোগ ও পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের। আবার কোথাও কোথাও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই চলছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান। গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরবাড়িতে থাকতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে-সেখানে। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। আবার আদালতে আত্মসমর্পণের পরও পাঠানো হচ্ছে কারাগারে এমন অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির সূত্রে জানা যায়, নতুন নির্বাচনের দাবিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালীন দেশজুড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আন্দোলন থেমে যাওয়ার পরে কিছু দিন গ্রেফতার অভিযান কম থাকলেও গত কয়েক দিন ধরে তা ব্যাপকতা লাভ করেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সম্প্রতি দল পুনর্গঠনে বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষণা আসার পরই সরকার তা বাধাগ্রস্ত করতে এই ধরপাকড় শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হামলা-মামলা সরকারের পরিকল্পনারই অংশ। গত ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ২টায় ভোলাতে বিএনপির একটি সম্মেলন থেকে ২১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন থানা বিএনপির সহ-সভাপতি হাসান হাওলাদার, বড়মানিকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেনু হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান, যুবদলের সভাপতি রবিন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক হেলাল বাকলাই। একই দিন বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ জেলা বিএনপির ৩৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালী থানায় নাশকতার মামলা করেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ছাড়াও শহর বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রফিকুর রহমান তোতন, জাফর সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনকে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামীম ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক রমজান আলী। তাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জেলার বাহুবল, লাখাই, নবীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- নবীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াত আমির মওলানা আশরাফ আলী, লাখাই উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি নুরুল আমিন, শায়েস্তাগঞ্জ থানা জামায়াত সেক্রেটারি ইয়াছিন খান, শায়েস্তাগঞ্জ থানা শিবির সভাপতি হোসাইন আহমদ, সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন ও বাহুবল উপজেলা শিবির কর্মী জহিরুল হক কায়েস প্রমুখ। এদিকে সোমবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের ১০ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শহরের পাওয়ার হাউস রোডের নিউ মোড়াইল এলাকার একটি মেস থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা জামায়াতের আমির প্রফেসর মমিনের ছেলে জামায়াতকর্মী মাওলানা দিদার, শিবির কর্মী রাসেল, সামিরাত, সোহেল, মাঈনুদ্দীন প্রমুখ। ২০১৪ সালে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত মামলায় আত্মসমর্পণ করলে আদালত সোমবার যশোর সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমদ ও ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে কারাগারে পাঠান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যাতে পুনর্গঠিত হতে না পারেন, সেই ভয়ে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দলের পুনর্গঠন কাজ চলছে। ফলে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে বসবেন, পরামর্শ করবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা গেছে ভোলায় ২১ জন লোক একত্রে বসেছে, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি-বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিল ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের সরকার নতুন করে ধরপাকড় শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলায় দলের ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৭:৫৫ ২৮১ বার পঠিত