বঙ্গনিউজ ডটকমঃইউরোপে যেতে গ্রিসের সীমান্তে শিশুকে নিয়ে বসে আছেন এক শরণার্থী। ছবি: এএফপিদুই ভাই মুহাম্মদ ও মুক্তারের পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে মেরেছিল সিরিয়ার সেনারা। এর পর দেশ ছেড়ে পালান তাঁরা। লেবাননের ত্রিপোলি বন্দরে একটি ভবনে কাজ নেন। সে দেশে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন জানান। দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সে গতি হয়নি। হতাশ দুই ভাই এখন যেকোনো উপায়ে ইউরোপে যেতে চান। টাকা জমলে মানবপাচারকারীর কাছে ধরনা দেবেন তাঁরা। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন লিবিয়ায় তাঁদের কিছু করার নেই।
মুহাম্মদ ও মুক্তারের মতো হাজারো সিরীয় নাগরিক ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছেন। জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ার জনসংখ্যা আগে ছিল দুই কোটি ২০ লাখ। কয়েক বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬০ লাখে। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী, ৪০ লাখ শরণার্থী বিদেশে রয়েছেন। তাঁরা জাতিসংঘের নিবন্ধনকৃত শরণার্থী। এর বাইরে থাকা শরণার্থীর সংখ্যা অনেক। সিরিয়ায় প্রায় ৭০ লাখ লোকের আশ্রয় নেই। তাঁরা দেশ ছেড়ে পালাতে চান। আশ্রয় চান। এ ক্ষেত্রে ইউরোপই তাঁদের প্রথম পছন্দ।
সিরিয়ায় থাকা ফিলিস্তিনি, ইহুদি, আর্মেনীয়, কুর্দি ও ইরাকিরাও ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন। লেবাননের রাজধানী বৈরুত ও তুরস্কের আদানার দিকেও যাচ্ছেন আশ্রয়প্রার্থীরা। কারণ সিরিয়ার পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। জানুয়ারিতে সিরিয়ায় সশস্ত্র ঘটনা ছিল চার হাজার। আগস্ট মাসে তা বেড়ে ছয় হাজারে পৌঁছেছে। পর্যবেক্ষকদের জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সবাই কেবল সহিংসতা আর ভয়ের কারণে পালাচ্ছে না। সিরিয়ার তুলনামূলকভাবে শান্ত এলাকা থেকেও লোকজন সরে যাচ্ছে। এমন একজন ওমর। দামেস্কের এমন এলাকায় থাকতেন তিনি, যা নিরাপদই বলা যায়। সেখান থেকে ওমর নেদারল্যান্ডসে গেছেন। ওমর বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সিরিয়ার প্রতিটি মানুষ এখন দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক।
ভয়ের পাশাপাশি অভাবের কারণেও মানুষ সিরিয়া ছাড়ছে। নিরাপদ থাকার জন্য তাঁরা বেছে নিচ্ছেন ইউরোপকে। সিরীয়দের থাকার জন্য লেবানন ও জর্ডানের পরিস্থিতি ভালো না। সেখানে জীবনযাপনের মান খারাপ। সিরীয়দের জন্য বিধিনিষেধও বেশি। এ কারণে তাঁরা সেখানে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা আরিয়ান রামারি বলেন, লেবানন ও জর্ডান শরণার্থীদের বোঝা মনে করে।
তুরস্ক, লেবানন, জর্ডান ও ইরাকে সিরিয়ার বৈধ শরণার্থীরা কীভাবে আছেন তা তুলে ধরলেই বিষয়টি বোঝা সহজ হয়। সেখানে সিরীয়দের বৈধভাবে কাজের সুযোগ নেই। জর্ডানে অন্য জায়গায় থাকার সুযোগ থাকলেও তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য করা হয়। লেবাননে সে ব্যবস্থাও নেই। সেখানে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সিরীয় শরণার্থীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
শুধু এসব দেশই নয়, সিরিয়ার প্রতি সহায়তা কমিয়েছে জাতিসংঘও। ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল তারা। এখন বলছে ওই অর্থের ৩৭ শতাংশ দেবে। খাদ্য সহায়তাও কমেছে। জুলাই মাসে বরাদ্দের মাত্র অর্ধেক খাদ্য সহায়তা পেয়েছে সিরীয়রা।
এসব কারণে সিরীয় শরণার্থীদের কাছে স্বপ্নের জায়গা ইউরোপ। ওই এলাকা যেন তাঁদের স্বর্ণদুয়ার। সম্প্রতি নরওয়েতে পৌঁছেছেন সিরীয় প্রকৌশলী লরেন্স মালা আলি। আরবের কোনো দেশে কেন আশ্রয় নেননি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দেশে যাব? আরব আমাদের চায় না। জর্ডান আমাকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বলেছিল। লেবাননের অবস্থাও ভালো নয়।’ তাই তিনি ইউরোপকে বেছে নিয়েছেন। সেখানে ভালো থাকবেন বলে তাঁর প্রত্যাশা।
ইউরোপকে বেছে নেওয়ার আরও একটা কারণ সিরীয় শরণার্থীরা কমবেশি অনেকে শিক্ষিত। তাই তাঁদের স্বপ্নও বড়। অন্য দেশে গিয়ে দীনহীনভাবে তাঁরা থাকতে চান না। সুইডেনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরীয় শরণার্থীদের ৪০ শতাংশ উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। আফগানিস্তানে এই হার ২০ শতাংশ। দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১০:২২:৩৭ ৩২৯ বার পঠিত