বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জ্ঞান যদি দ্বীপ হয়, তবে তার তটরেখা হবে কৌতূহল, নতুনকে জানার আগ্রহ। দ্বীপ যত বড়, তটরেখা ততই বড় হবে। মার্কিন বক্তা র্যা লফ ওয়াশিংটন সকম্যানের কথা এটি। টেলিযোগাযোগ পণ্য নির্মাতা হুয়াইয়ের ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ কর্মসূচির মূল কথাও তাই। তরুণদের মধ্যে প্রযুক্তির জ্ঞান ছড়িয়ে দাও। তাঁরা সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ গড়বে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সিডস ফর দ্য ফিউচারের আয়োজন করে হুয়াই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ধারণা জমা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। ধারণার মূল বিষয় ছিল সুন্দর পৃথিবীর জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান। বিভিন্ন পর্বে যাচাই-বাছাই শেষে নয়জন প্রতিযোগী চীনে হুয়াইয়ের গবেষণাগারে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। সম্প্রতি তাঁরা ফিরে এসে চীনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রজন্ম ডটকমকে।
নয় শিক্ষার্থী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তন্ময় পাল,
ফারহান-বিন-তারিক ও সাজিদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরশ চাকমা ও ইয়াসীন আর রাহমান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাসনিমুন ফাইকা এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তাহমিদুল বারী, নাজমুস সাকিব ও মোহসি মাসনাদ। এঁদের মধ্যে সাজিদ মাহমুদ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, বাকি সবাই চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। অপর দিকে ইয়াসীন আর রাহমান, নাজমুস সাকিব ও মোহসি মাসনাদ পড়ছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে, অন্যরা তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগে।
যস্মিন দেশে যদাচার
চীনে ম্যান্ডারিনের বাইরে দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানে, এমন অধিবাসীর খোঁজ পাওয়া রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার। ঝামেলা এড়াতে চলার মতো ম্যান্ডারিন শেখা কতটা জরুরি, তা বেশ হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছেন মোহসি মাসনাদ। খাবার খেতে এক জোড়া চপস্টিকের বদলে চামচ পেতে রীতিমতো গলদঘর্ম হয়েছেন তিনি। হুয়াই কর্তৃপক্ষের মাথায় নিশ্চয় সে চিন্তা ছিল। চীনে পৌঁছেই তাই সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর বেইজিং ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তাঁরা পাঁচ দিন ছিলেন। চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, চিত্রকলা এবং ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয় তাঁদের। এই অংশটা বেশ উপভোগ করেছেন সবাই। সাজিদ মাহমুদ যেমন বললেন, ‘নতুন একটা ভাষা শেখা যে এত আনন্দময় হতে পারে, তা ছিল আমদের ধারণার বাইরে।’
উন্নত প্রযুক্তির হাতেখড়ি
ভাষা শিখলেন, সংস্কৃতি জানলেন, ক্যালিগ্রাফি করলেন। এরপর পাড়ি জমালেন দক্ষিণে। বন্দরনগরী শেনঝেনে, হুয়াইয়ের সদর দপ্তরে। ১৯৮৭ সালে এই শহরেই যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। শেনঝেনে নয় দিন ছিলেন তাঁরা। এখানেই তাঁদের মূল প্রশিক্ষণ চলে। ইয়াসীন আর রাহমান জানান, আধুনিক টেলিযোগাযোগপ্রযুক্তি এবং আগামী বিশ্বের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানো ছিল প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য।
প্রথম দিনে হুয়াই প্রদর্শনী মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ভবিষ্যৎ মোবাইল প্রযুক্তি কেমন হতে পারে তা দেখানো হয়। তাহমিদুল বারী ফাইয়াজের ভাষায়, ‘চোখধাঁধানো প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।’ এরপরেই হুয়াইয়ের গবেষণাগারে গিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে হাতেকলমে শিক্ষা পান তাঁরা। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক (থ্রি ও ফোরজি) তো বটেই, পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্কের ধারণাও পান এই শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ক্লাউড কম্পিউটিং, স্মার্টহোম এবং অ্যাজাইল প্রযুক্তি সম্পর্কেও শিখেছেন বলে জানালেন ফারহান-বিন-তারিক। সবশেষে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সনদ। যস্মিন দেশে যদাচার বলে নিজের সংস্কৃতির কথা ভুলে যাননি তাঁরা। সেখানে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেন, দেশাত্মবোধক গান গেয়েও শোনান তাঁরা।
চীনে দুই সপ্তাহের এই শিক্ষা দেশে কাজে লাগাতে চান পরশ চাকমা। তিনি বলেন, ‘কীভাবে একটি দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবদান রাখা যায়, তার ধারণা পেয়েছি। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখতে পারব।’ চীনের দেশজ সংস্কৃতি সম্পর্কে যেমন জেনেছেন, তেমনই পেয়েছেন হুয়াইয়ের প্রযুক্তিগত দক্ষতা। কর্মজীবন শুরুর আগে এই অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দেবে বলেই উল্লেখ করেন তাসনিমুন ফাইকা।
শিক্ষা তো শুধু গবেষণাগারে বন্দী থাকে না। নতুন একটা দেশ, দেশের মানুষ, দেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি থেকেও শেখার অনেক কিছু থাকে। আর তাই চীনের মহাপ্রাচীর, ফরবিডেন সিটি, তিয়েন আনমেন স্কয়ার ঘুরে দেখেন তন্ময় পালরা। সিডস ফর দ্য ফিউচারে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন। সবার সঙ্গে শিক্ষা-সংস্কৃতি-জ্ঞান বিনিময়ের চমৎকার একটি ক্ষেত্র বলা যায়। দুসপ্তাহের কর্মসূচি শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর শেনঝেন থেকে ফিরতি পথ ধরেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন উন্নত প্রযুক্তির ধারণা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৯:৫০ ৪৪৫ বার পঠিত