বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
বাংলাদেশের অন্যতম সিনিয়র বিনোদন সাংবাদিক আওলাদ হোসেন আর নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেন, ‘আমার আর মৌসুমীর খুবই কাছের মানুষ ছিলেন। নানাভাবে আমাদের পরামর্শ দিতেন। আমাদের পরিবারের এই পরম বন্ধুকে হারিয়ে শোকাগ্রস্ত। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে তার জন্য দোয়া করবেন।’ মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম আওলাদ ভাই আর নেই। জানি না, কি হয়েছে? এই খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। শুধু এইটুকু বলব তিনি অনেক ভাল মানুষ। তার মত ভাল মানুষ মিডিয়ায় কমই দেখেছি। ভাল মানুষগুলো কেন দুনিয়া থেকে এতো তাড়াতাড়ি চলে যান?’ চিত্রনায়িকা অমৃতা খান বলেন, ‘আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, আওলাদ আঙ্কেল আর নেই। বৃহস্পতিবার চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে কথা হল। আর রাতেই শুনলাম তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমার বড় চাচ্চুর (খালেদ খান) বন্ধু ছিলেন। আমাকে সিনেমা নিয়ে খুবই ভালো উপদেশ দিতেন। তার চলে যাওয়া বিশ্বাস করতে পারছি না।’ সাংবাদিক আওলাদ হোসেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ১৯৬৬ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার ইসলামপুরের নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত মোবারক হোসেন ও মা লুৎফুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। হাম্মাদিয়া হাইস্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্স ও ১৯৯০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। প্রবীণ এই সাংবাদিক ১৯৮৭ সালে দৈনিক খবরের ম্যাগাজিন ‘সাপ্তাহিক ছায়াছন্দ’তে সহ-সম্পাদক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের কর্মজীবন ছেড়ে ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান অবধি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক যুগান্তর, সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা, সাপ্তাহিক মনোরমা, সাপ্তাহিক বর্তমান দিনকাল, সাপ্তাহিক চিত্রালী, পাক্ষিক প্রিয়জন, পাক্ষিক বিনোদন বিচিত্রা, চ্যানেল আইয়ের পাক্ষিক আনন্দ আলো, পাক্ষিক আনন্দ ভুবন পত্রিকায় নিয়মিত আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম ও প্রতিবেদন লিখেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিবেদকদের অধিকার আদায় ও চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিজেকে বিভিন্ন আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ২০০২-২০০৩ কার্যবর্ষে ‘ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক’পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ফিল্ম জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি মৌসুমী হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির মো. শাহবাজ হোসেন মুন ও অপরাজিতা হোসেন মীম নামে দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ছেন। আওলাদ হোসেন দেশের চলচ্চিত্রের অনেক ইতিহাস ও ঘটনার সাক্ষী। তিনি নবীন বিনোদন সাংবাদিকদের কাছে বটবৃক্ষের মত।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২৮:৩৩ ২৮৮ বার পঠিত