বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ঢাকায় চরমপন্থিদের হামলার ঘটনা ঘটতে পারে’ এমন তথ্য যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার হাতে ছিল।নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই তারা এমন আভাস পেয়েছিল এবং সঙ্গে সঙ্গেই তারা তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। অস্ট্রেলিয়া যখন তাদের ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা তাদের পদক্ষেপ নিয়ে হাসি-তামাশা করেছি। কিন্ত কিসের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানার চেষ্টা করিনি। সুনির্দিষ্টভাবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সময়টায় বাংলাদেশে ‘জঙ্গি’ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে- এমন খবর অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য কীভাবে পেল? সেই তথ্য হয়তো তারাই বলতে পারবে। তবে দুটি দেশই তাদের মিত্রদের এই আশঙ্কার তথ্য জানিয়েছে, অন্তত কানাডাও যে ব্যাপারটা অবহিত হয়েছে, সেটা কানাডার সরকারি সূত্রগুলোও এখন স্বীকার করছে। আসলে পশ্চিমের দেশগুলোও সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কার কথা জেনে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশই কেবল এ ব্যাপারে পুরো মাত্রায় অন্ধকারে ছিল। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের দেশগুলো যখন সম্ভাব্য ‘জঙ্গি’ হামলার তথ্য হাতে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে সতর্ক নজর রাখছে, বাংলাদেশ তখন বিশাল লাটবহর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের অধিবেশনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কানাডার সরকারি সূত্রমতে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সময়টায় বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট স্থাপনা বা পশ্চিমা নাগরিকরা জঙ্গি হামলার শিকার হতে পারেন- বলে যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে তথ্য ছিল। সেপ্টেম্বরের শেষ সময়টায় এসেই ঢাকায় ইতালীয় একজন উন্নয়ন কর্মী খুন হয়েছেন। আর এই খুনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে মুসলিম চরমপন্থি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’। অর্থাৎ জঙ্গিদের হাতেই একজন বিদেশি নাগরিকের প্রাণহানি হলো। পশ্চিমা দুটি দেশের আশঙ্কা কিংবা অনুমান, যাই বলি না কেন- একেবারে দুয়ে দুয়ে চারের মতোই তো মিলে গেল। বাংলাদেশে যে জঙ্গি হামলা হতে পারে- সে ব্যাপারে কি যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল? নাকি তারা বিভিন্ন ঘটনার পরম্পরা বিশ্লেষণ করে একটি ধারণায় উপনীত হয়েছিল? ২১ সেপ্টেম্বর ‘ইসলামিক স্টেট’ একটি ভিডিও বার্তায় ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক স্টেটবিরোধী সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া দেশগুলোর বির”দ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ওই বার্তায় বলা হয়, সুযোগ বুঝে ইসলামিক স্টেটবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া দেশগুলোর নাগরিক, তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট স্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর আহ্বান জানানো হয়। ইসলামিক স্টেটের ওই ভিডিও বার্তাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয় পশ্চিমা দেশগুলো। তারা ধারণা করে, এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে উগ্রপন্থিরা পশ্চিমাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। কেবল যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াই সম্ভাব্য এই হামলার স্থান হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করে। লক্ষণীয় বিষয়, ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক খুন হওয়ার পরপরই ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে নেয়। আর এই দায় স্বীকারের মধ্য দিয়ে ইসলামিক স্টেটের ভিডিও হুমকি এবং পশ্চিমাদের আশঙ্কাকে ‘যথার্থ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রশ্ন হচেছ, ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই যেখানে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে তাদের স্থাপনা এবং নাগরিকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা কি এসবের কিছুই জানেনি? যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া কি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সরাসরি, কিংবা নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল? জানানো হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছে? কিংবা অস্ট্রেলিয়া যখন বাংলাদেশে ক্রিকেট দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায়, তখনো কি সুনির্দিষ্টভাবে এসব আশঙ্কার বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছিল? পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্র পর্যায়ে খুনিরা দিনের পর দিন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছে, সেই সময়কার দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করেছে। ঢাকার গোয়েন্দারা, কূটনীতিকরা সেই তথ্য জানতেও পারেনি। বাংলাদেশে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য হাতে নিয়ে পশ্চিমের প্রভাবশালী দেশগুলো উদ্বেগে সময় কাটায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কূটনীতিক বা গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক- কেউ সেগুলো জানতেও পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৫:২৬ ৩৬৮ বার পঠিত