বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনের ফল ঘোষণা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। আজ রবিবার সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি জমা দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬ আগস্ট দেশের ৭৭টি কেন্দ্রে বার কাউন্সিলের ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে ভোটার ছিলেন ৪৩ হাজার ৩০২ জন। গত বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন কাউন্সিলের পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রিট প্রসঙ্গে ইউনূস আলী আকন্দ জানান, বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস ও বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২-এর বিধিমালার ১৫ (২) বিধি অনুসারে দেশের সব কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার আসার পর কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে সব ব্যালট গুণে ফল ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবার তা করেননি। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসা ফল ঘোষণা করেছেন তিনি। বিধি ভঙ্গ হওয়ায় এই ফলকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়েছে।
বার কাউন্সিলের চূড়ান্ত ফল অনুসারে কাউন্সিলের সাধারণ সদস্যের সাতটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা জয় পেয়েছেন পাঁচটিতে। এই প্যানেল থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১০৯ ভোট পেয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার। এছাড়াও প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম. আমীর-উল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, মানবাধিকার আইনজীবী জেড.আই. খান পান্না এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ.ম. রেজাউল করিম নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত এই পাঁচজনের মধ্যে আমীর-উল ইসলাম ও বাসেত মজুমদার এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ওই নির্বাচনে সাধারণ সদস্যের দুটি আসনে জয় পেয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা। জয়ী প্রার্থীরা হলেন বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সদস্য এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অঞ্চলভিত্তিক গ্রুপ সদস্যের মধ্যে ছয়টিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা হলেন কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু, এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, মো. ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী, পারভেজ আলম খান, মো. ইয়াহিয়া ও মো. রেজাউল করিম-১। বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে শুধু মো. কাইমুল হক কাউন্সিলের গ্রুপ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে এই ফলকে ‘বেআইনি’ ও ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত কয়েকজন আইনজীবী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেনন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের তিন নেতা।
ওই সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘গত বুধবার ফল ঘোষণার আগে বিধি অনুসারে কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে প্রতিটি ব্যালট পেপার গুণতে আবেদন করেছিলাম। আবেদন গ্রহণ করে ব্যালট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। কিন্তু সরকার-সমর্থক আইনজীবীদের চাপে অ্যাটর্নি জেনারেল তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণা শুরু করেন। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। এছাড়া বেসরকারি ফলে আমাদের চারজন জিতলেও চূড়ান্ত ফলে তিনজন জিতেছেন।’
বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের এমন দাবি নাকচ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে হেরে গেলে এর ফল প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা রকম কথা বলা হয়। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়।’
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরও বলেন, আপিল বিভাগের দায়িত্বে আমি ভোটার তালিকা ও সুষ্ঠু নির্বাচন করেছি। যদি কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, আদালত সেটা দেখবেন। আদালত নির্দেশ দিলে ব্যালট পেপার পুনর্গণনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৮:৫১ ২৯৭ বার পঠিত