বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ভারতীয় চ্যানেল সনি আটের ক্রাইম পেট্রোল-এ প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখে প্রভাবিত হয়েই অপহরণ ও মুক্তিপণের পরিকল্পনা সাজায় নাটোরে নিহত মাদসার ছাত্র তানভীরের সহপাঠীরা। নাটোর শহরের সাইফুল ইসলাম তুষার দম্পতির একমাত্র সন্তান হওয়ায় সহপাঠীদের মুক্তিপণের টার্গেট হয় তানভীর। বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান হওয়ায় মুক্তিপণ আদায়ের ক্ষেত্রে তানভীর হতে পারে সহজ হাতিয়ার। আর এভাবেই অপহরণ ও মুক্তিপণের পরিকল্পনা সাজায় আটক তিন মাদরাসাছাত্র। সোমবার রাতে র্যাবের হাতে আটকের পর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা অকপটে স্বীকার করে তারা।তানভির হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত আটক তিন সহপাঠী বায়েজিদ, হুসাইদ ও নাঈমকে বুধবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হক বসুনিয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণের জন্য হাজির করা হয়। সেখানে তিন কিশোর অপরাধী সহপাঠীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে, একটি বিদেশি চ্যানেলের এমন ক্রাইম অনুষ্ঠান থেকে কিশোররা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন নাটোরের অভিভাবকরা।
নাটোর আদালতের পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সহপাঠীকে অপহরণের পর খুন করে লাশ গুম করার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর হুসাইদ হোসেন, বাইজিদ হাসান ও নাঈম হোসেনকে নাটোর থানা পুলিশ বুধবার দুপুর ২ টার দিকে নাটোর থানা থেকে নাটোর কোর্ট হাজতখানে রাখে। আদালত আসামিদের জবানবন্দি দেয়ার ফলাফল সম্পর্কে জানান এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দুইঘণ্টা সময় দেন। ম্যাজিস্ট্রেট তিন কিশোরকে বলেন, ‘আমি পুলিশ নেই বিচারক। তোমরা জবানবন্দি দিতে চাইলে স্বেছায় দিতে পার। তোমাদের এ জন্য পুলিশের কাছে পাঠানো হবে না।’
পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আসামিদের আবারও বিচারকের সামনে হাজির করলে তারা জবানবন্দি দিতে সম্মতি জানায়। এরপর এক এক করে তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন বিচারক।
জবানবন্দিতে তারা কী কী বলেছে তা বিস্তারিত জানা না গেলেও তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তারা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে আটকের পর লাশ উদ্ধারের অভিযান কালে হত্যায় অংশ নেয়া বায়েজিদ জানায়, সনি আটের ক্রাইম পেট্রোল দেখে গত ২১ আগস্ট বিষয়টি তার মাথায় আসে। এরপর সে হুসাইদ ও নাঈমের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে। পরে তিনজনের যৌথ পরিকল্পনায় ২৫ আগস্ট তানভীরকে হত্যা করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান হওয়ায় তানভীরকেই বেছে নেয় তারা।
আটক বায়েজিদ আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় তারা তিনজনই উপস্থিত ছিল। পরিত্যাক্ত বাড়িতে ডেকে আনার পর হুসাইদ তানভিরের গলায় কাপড় শ্বাসরোধ করে এবং এ সময় সে তানভীরের পা চেপে ধরে। তানভীর নিস্তেস হয়ে পড়লে হুসাইদ ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর লাশ সেখানে রেখে নাঈমের দোকানে শরীরের রক্ত ও ক্ষুরের রক্ত পরিষ্কার করে। সে আরও জানায়, তানভীরের পিতার কাছ থেকে তারা মুক্তিপনের টাকা পেলে নাটোর থেকে পালিয়ে যেতো।
তারা জানায়, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নাঈমের পিতা আব্দুর রহিমের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে কেনা দুইটি সিম থেকে মোবাইল ফোনে নিখোঁজ ছাত্রের বাবা সাইফুল ইসলাম তুষারের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হয়।
এ ব্যাপারে নিখোঁজ তানভিনের বাবা তুষার নাটোর থানায় জিডি করে ও র্যাব-৫ কে জানায়। পরে র্যাবের পরামর্শে তানভীরের বাবা তুষার তানভিরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তারা তানভীর সাজিয়ে অন্য একজনের সাথে কথা বলিয়েও দেয়। পরে মোবাইল মুক্তিপণের দাবি করা মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে র্যাব ৩১ আগস্ট সোমবার রাতে ওই মাদরাসার দুই ছাত্র বায়েজিদ হাসান (১৪) ও হুসাইদ হোসেন (১৫) এবং মাদরাসার সাবেক ছাত্র নাঈমকে (১৫) আটক করে। পরে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শহরের আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমী মাদরাসার পেছনের একটি সেফটিক ট্যাংকি থেকে মঙ্গলবার ১ সেপ্টেম্বর তানভীরের লাশ উদ্ধার করে র্যাব।
আটক বায়েজিদ হাসান (১৪) নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাবুল হাসানের ছেলে, হুসাইদ হোসেন (১৫) নাটোরের সিংড়া উপজেলার জোর মল্লিকা গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে এবং ওই মাদরাসার সাবেক ছাত্র মো. নাঈম (১৫) নাটোর শহরের কালুর মোড় এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে।
বায়েজিদ ও হুসাইদ ওই মাদরাসায় তানভীরের সঙ্গে পড়াশোনা করলেও নাঈম মাস তিনেক আগে মাদরাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে দোকানে কাজ করতো। এদিকে, বিদেশি চ্যানেলের এমন ক্রাইম অনুষ্ঠান থেকে কিশোররা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন নাটোরের অভিভাবকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১৯:২৭ ৫৭০ বার পঠিত