বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ যদি গোলশূন্য ড্র থাকে?
ছাপার ভুল নয়। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে এমন একটা প্রশ্নই কাল ছুটে গেল টিম কাহিলের দিকে। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা ভেতরে ভেতরে রাগতে পারেন। বলে কী! বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ফুটবল ম্যাচ ড্র!
কাহিল যথাসম্ভব ভদ্রতা রেখেই দিলেন উত্তর এবং তার মধ্যেও রইল একটা হুংকার, ‘আমাদের জন্য এখন হল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করাও হবে হতাশার, আমরা তাতে খুশি হব না!’
হল্যান্ডের সঙ্গে ড্রও যিনি মানতে পারেন না, তাঁর পক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র মানে জীবনের বড় কিছু হারানোর মতোই ব্যাপার। কাহিল তাই সাফ বলে দিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র হবে বড় এক অঘটন। আসলে ড্র নিয়ে এসব বলাটা স্রেফ কথার কথা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই অসম লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরেরই এক দল।
আজ তাই অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশ কয় গোলে হারবে সেটিই বরং আলোচনায়। এখানে-সেখানে এর-ওর মুখে রসিকতার সুরেও কথাটা শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ না গোলে ভাসে! বাফুফে ভবনে কাল এক আড্ডায় সাবেক খেলোয়াড় বাদল রায়, হাসানুজ্জামান বাবলু, আবদুল গাফফার বলছিলেন, কম গোল খেয়ে মান-সম্মান নিয়ে ফিরতে পারলেই হয়!
বাংলাদেশ দলও তা জানে এবং সেভাবেই লিখতে চায় চিত্রনাট্য। কাল পার্থের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ-অধিনায়কও বেশ আত্মপ্রত্যয়ী থাকতে চাইলেন। অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের কণ্ঠে সাহসী উচ্চারণ, ‘অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলাটা দারুণ ব্যাপার। কিন্তু আমরা ভীত নই, ফুটবল খেলাটা ১১ বনাম ১১।’
মামুনুল হয়তো তাঁর উচ্চাশা থেকেই এমনটা বলছেন। কিন্তু সত্যটা হলো অস্ট্রেলিয়ার সেই ১১ জনই ইউরোপসহ বড় বড় লিগ দাপিয়ে বেড়ানো ফুটবলার। সবচেয়ে বড় নাম টিম কাহিল। চোটগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিলে জেডিনাকের বদলে তিনিই সকারুদের অধিনায়ক, গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়ার সেরা খেলোয়াড় এবং দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও (৩৯)। টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলা কাহিল একাই আজ বাংলাদেশের রক্ষণ ছত্রখান করে দিতে পারেন। তাঁকে সামলাবেন কীভাবে?
চায়ের কাপে এখন এসব কথাই আসছে ঘুরেফিরে। তবে মামুনুলের জবাবটাও হলো বেশ চৌকসই, ‘ওর দুটি হাত, দুটি পা আছে। আমার চেয়ে সে ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকেই সেরাটা দিতে চেষ্টা করবে।’
মামুনুল হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন কাহিলও তাঁদের মতোই একজন মানুষ, অন্যগ্রহের ফুটবলার নন। ঠিক ‘বাঘের’ মতোই কথা। এই সাহসী উচ্চারণে মামুনুলের দল হয়তো অনুপ্রাণিত থাকবে। কিন্তু লড়াইটা যে গোলিয়াথের সঙ্গে ডেভিডের!
অস্ট্রেলীয়দের চোখ স্কোরলাইনে বড় অঙ্ক বসানোর দিকেই। গোলের মধ্যে বসবাস করছেন স্বয়ং কাহিল, চীনের সাংহাই সিনহুয়ার হয়ে গত ১০ ম্যাচে তাঁর নামের পাশে ৭ গোল। বাংলাদেশ গোলরক্ষক সোহেলকে আজ তাই বড় পরীক্ষাই দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার কোচ-অধিনায়ক দুজনই অবশ্য সম্মান দেখালেন প্রতিপক্ষকে। কাহিলের মুখে বিনয়ও, ‘বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না।’ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ অ্যাঞ্জে পোস্তেকোগলুর কথা, ‘বাংলাদেশ প্রতি–আক্রমণে ভালো। আমরা তাদের গুরুত্ব সহকারেই নিচ্ছি।’
ফিফা র্যা ঙ্কিংয়ে ১৭০তম দলের বিপক্ষে ৬১তম দল এই শ্রদ্ধা না দেখালেও পারে। খেলাটা তো অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণ বনাম বাংলাদেশের রক্ষণ। বাংলাদেশও রক্ষণে লোক বাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে যতটা সম্ভব স্কোরলাইন ভদ্রস্থ রাখতে চায়। কোচ ডি ক্রুইফের রণপরিকল্পনাজুড়ে আছে ‘ভালো রক্ষণ করো’ নির্দেশনা। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্লেটে সুস্বাদু খাবার না হয়ে দলের কাছে একটু লড়াইও চান। ডাচ কোচ বিশ্বাস রাখছেন ফুটবলের সেই আপ্তবাক্যে, ‘ফুটবলে অনেক কিছুই হতে পারে।’
বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় পার্থ ওভালে শুরু ম্যাচে ‘ফুটবলে অনেক কিছুই হতে পারে’ আশা করা বাড়াবাড়িই। তা যতই বাংলাদেশ দলের মতো অস্ট্রেলিয়ার অন্দরেও অস্থিরতা চলুক না কেন। তার ওপর ১০ বছরেরও বেশি সময় পর পার্থে খেলতে নেমে স্থানীয় দর্শকদের খুশি করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সকারু কোচ।
এশিয়ার সেরা ফুটবলারদের সঙ্গে জীবনের সেরা ম্যাচ খেলতে নামছেন মামুনুলরা। গোলে না ভেসে আনন্দটা থাকুক ম্যাচের পরও!
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৬:৫৬ ৩৭০ বার পঠিত