বঙ্গনিউজ ডটকমঃ উৎসবের রং কিছুটা কেড়ে নিল বৃষ্টি। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থানান্তরিত হলো সংবাদ সম্মেলনকক্ষে। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম ম্যাচটা তো হতেই পারল না! মাঠের বেশির ভাগ অংশ ঢাকা থাকল সারা দিন। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিল দুই দল।
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আইসিআরসি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট তারপরও প্রথম দিনই পেল প্রাণের স্পন্দন এবং সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে। বৃষ্টির মধ্যেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে আসলে খেলাধুলাসহ কোনো কিছুতেই বাধা নয়, উদ্বোধনী বক্তৃতায় সেটা মনে করিয়ে দিয়ে বারবারই উৎসাহ দিলেন খেলোয়াড়দের। বাংলাদেশ, ভারত, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চারজন করে খেলোয়াড় উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এবং বিসিবি ও টুর্নামেন্টের আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) কর্মকর্তারা।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক আসর বিশ্বে এটাই প্রথম। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী পাঁচ দলের খেলোয়াড়দের তাই এ ধরনের ক্রিকেটের ‘মশালবাহক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইচ্ছা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই যে স্বপ্নপূরণের বাধা হতে পারে না, আপনারা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে খেলাধুলায় দক্ষতা অর্জন সম্ভব। আমরা চোখের সামনেই তার উদাহরণ দেখছি।’ এমন একটা টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য আইসিআরসি এবং বিসিবিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। আর দিয়েছেন ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজে সরকারের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি।
সমাজের সব ক্ষেত্রেই অবদান রাখছে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। খেলাধুলাও ব্যতিক্রম নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় উঠে এসেছে সে প্রসঙ্গও, ‘স্পেশাল অলিম্পিকে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা দেশকে গর্বিত করেছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটারদের পর শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়েরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়েছে।’ আইসিআরসি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেটের অবস্থান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি। আমি নিশ্চিত আইসিআরসি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মানুষের আবেগকে ছুঁয়ে যাবে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে সবাইকে আরও সচেতন করবে।’ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জীবনের মানোন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকারের কথাও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা, ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটা সমাজ গড়া, যেখানে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না।’
কালই নেওয়া বিসিবির একটি সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিফলনও পাওয়া গেছে। বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভা শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের জন্য আলাদা শাখা করার পরিকল্পনার কথা, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বিভাগ করবে। ওই বিভাগ বাংলাদেশে যত প্রতিবন্ধী ক্রিকেট-প্রতিভা আছে, তাদের খুঁজে বের করবে।’
আইসিআরসি টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো আজ থেকে হবে বিকেএসপিতে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ছিল শুধু কালকের উদ্বোধনী ম্যাচটাই। সেটাও বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ‘হোম অব ক্রিকেটে’ খেলা থেকে বঞ্চিত হলো বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের খেলোয়াড়েরা। অধিনায়ক আলম খানের কণ্ঠে সেই হতাশা, ‘আমরা খেলার জন্য উন্মুখ ছিলাম। সব সময় তো আর এ মাঠে খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না!’ প্রায় একই কথা বলেছেন কোচ মাসুদ হাসানও, ‘বৃষ্টির জন্য খেলা না হওয়াটা হতাশাজনক। আমরা এখন পরের ম্যাচগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি।’
বৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচটি না হলেও আলম খান আর তাঁর দলের খেলোয়াড়দের, এমনকি অন্য দলের ক্রিকেটারদের স্মৃতির আয়নায়ও ভাসবে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মাঠে নেমে সেলফি তুললেন সবাই, অভিনন্দন পেলেন খেলা দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। গ্যালারির কাছে গিয়ে খেলোয়াড়েরা ছবি তুলেছেন তাঁদের সঙ্গে, হাত মিলিয়েছেন। শহীদ জুয়েল ও মুশতাক স্ট্যান্ডে এত মানুষের সমাগম যেন প্রধানমন্ত্রী শেষ কথাটাই আরেকবার ছড়িয়ে দিল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আকাশে-বাতাসে, ‘আপনাদের দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হই।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৭:৩৫ ৩৭৭ বার পঠিত