বঙ্গনিউজ ডটকমঃ গত কয়েক বছরে গুম-খুনের শিকার হওয়া মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিশ্ব গুম দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের গুম হওয়া নেতাকর্মীর স্বজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় গুম হওয়াদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান বিএনপিপ্রধান।
সরকার ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় খুন, গুম ও সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস পালন করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করেনি। কারণ তারা এ কর্মকা-ে জড়িত। এ দিবসটি পালন করতে তাদের লজ্জা ও ভয় হয়।
তিনি বলেন, এ দিবসে স্বজনহারারা এই সরকারের কাছে তাদের আত্মীয়স্বজনকে ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি, এ অবৈধ সরকার তাদের কথার কোনো প্রতিদান দেবে না। তাই দেশের নিরপেক্ষ লোক দিয়ে জাতিসংঘের অধীনে খুন, গুম ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি, যাতে স্বজনহারা মানুষগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পায়।
‘অনন্ত অপেক্ষা… বাংলাদেশে গুম ২০০৯-২০১৫’ গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সহমর্মিতা শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুমের শিকার ২৬ পরিবার ও তাদের ৬০/৬৫ জন স্বজন।
ছিলেন বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা, নোয়াখালীর হাজীরপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভিন আক্তার, লাকসাম পৌর বিএনপি সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার ও তার ছোট ভাই গোলাম ফারুক, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের মা খাদিজা বেগম, তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া যুবদলের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন ও বোন ফেরদৌসি, মো. ইয়াকুব আলীর ভাই মো. আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মুন্নার মা ময়ূরী বেগম ও বাবা মো. শামসুদ্দিন, আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়শা আলী, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমা, কাওসারের মা কমলা খাতুন, বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা, গুলশান থানা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা বানুসহ অন্য স্বজনহারা ব্যক্তিরা।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান, বারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।
গুম প্রতিরোধ দিবসের
অনুষ্ঠানটি হয়নি
এর আগে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সব আয়োজন শেষ করেও রোববার অনুষ্ঠানটি করতে পারেননি আয়োজকরা। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর জন্য অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল বলে দাবি আয়োজকদের।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, দ্য এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার ও দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ছিল এর আয়োজক।
সকালে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, যে মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা সেখানে পুলিশ সদস্যরা বসে আছেন। জানতে চাইলে উপস্থিত এক পুলিশ সদস্য জানান, ভোর থেকে তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, গতকাল অধিকারের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সেখানকার এক কর্মী ফোন করে মিলনায়তনের বুকিং বাতিল করার কথা জানান। তবে এ বিষয়ে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ জানায়নি।
জাতিসংঘ ২০০২ সাল থেকে কাজ শুরু করে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করে। ইংরেজিতে এর নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রোটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়; তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২২:০৪ ৩০১ বার পঠিত