বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাটি রোববার গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে। কিন্তু স্বয়ং উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া অভিযোগ করছেন, বিরোধী শিক্ষকরাই তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। রোববার দিবাগত রাত ১০টায় তিনি এমন অভিযোগ করেন।
উপাচার্য বলেন, ‘রোববার সকালে আমি আমার কার্যালয়ে ঢুকার সময় আন্দোলনরত শিক্ষকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছি। এসময় ড. জাফর ইকবালের সহধর্মিনী ড. ইয়াসমীন হক, মো. ইউনুছ, মো. ফারুক উদ্দিনসহ কয়েক জন শিক্ষক আমাকে লাঞ্ছিত করেন।’ তার দাবি, আন্দোলনরত শিক্ষকরা লাঞ্ছিত করছেন দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে। এরপর তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আমি একাডেমিক কাউন্সিল করতে অফিসে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথিমধ্যে শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়ি। তাই আমি রাস্তা দিয়ে অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি।’ এছাড়াও তিনি কাদামাটি ও ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে অফিসে গিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষকদের হামলায় আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছি।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের উপর হামলা করেছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে এমন অভিযোগও আমি পায়নি।’ তবে তিনি বলেছেন, রোববার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কোনো শিক্ষকের উপর হামলা করার অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’। এরপর থেকে শিক্ষকদের বাধায় কোনো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভা করতে পারেননি উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া।
কিন্তু রোববার বিকেলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার আহ্বান করেন উপাচার্য। এর প্রতিবাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’। কিন্তু তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা দিতে সকাল ৬টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অপর দিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরাও তাদের কর্মসূচি পালন করেত ক্যম্পাসে অবস্থান নেয়।
সকাল ৮টায় ভিসি তার কার্যালয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ভিসিকে তার কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয়। এসময় শিক্ষকরা ভিসিকে ঘিরে টানাহেঁচড়া করেন। এরপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে শিক্ষকদের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয় তারা।
ছাত্রলীগের এ হামলায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ ৭ শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’র আহবায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম। ছাত্রলীগের হামলার পরপরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। লজ্জায়, অপমানে, ঘৃণায় আর অভিমানে নির্বাক জাফর ইকবালকে তখন বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে।
তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘আজকে যারা আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করলো তারা যদি আমার ছাত্র হয়, তাহলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিৎ!’ এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশের প্রতিহতের ঘোষণার পরও অবশেষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সভা শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ৬ মাস পর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি আমিনুল হক ভূইয়া।
তিনি জানান, মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা নির্ভর করে একাডেমিক কাউন্সিল এ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। একাডেমিক কাউন্সিলে আগামী ভর্তি পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষার কমিটি গঠনসহ প্রশাসনিক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো জানান, সভায় অধ্যাপক নারায়ন সাহাকে সভাপতি ও ডা. মোস্তাক আহমদকে সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ভর্তি পরীক্ষা কমিটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২২:৫৪ ৩০২ বার পঠিত