সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন করেছেন শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ তিনি বলেছেন, “যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই স্লোগানের এতবড় অপমান আমি আমার জীবনে দেখিনি।”
রোববার (৩০ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাতের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর হামলা হয়। এসময় অন্তত সাতজন শিক্ষক সরকার সমর্থক এই ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম।
জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় জাফর ইকবাল বলেন, ‘হামলাকারীরা যদি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে থাকে তাহলে এর শিক্ষক হিসেবে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিৎ।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চড়াও হয়ে তাদের মারধর করার ঘটনায় এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষকরা যে কারনে আন্দোলন করছে আমি তা ১০০ ভাগ সমর্থন করি। কারণ এই উপাচার্য আসার দুমাস পর আমি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি, কারণ আমি দেখেছি যে উনি মিথ্যা কথা বলেন। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলেন তার সাথে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি এখনই গলায় দড়ি দিয়ে মরছি না, কিন্তু আমি তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করলো, আমাকে সেটা এখানে বসে বসে দেখতে হলো।’
উপাচার্যই ছাত্রলীগের কর্মীদের ব্যবহার করেছেন, এমন অভিযোগ এনে তিনি বলেন, উপাচার্য যদি মনে করেন এভাবে আন্দোলন থামানো সম্ভব, তাহলে সেটা ভুল করছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘এটি অনাক্ষিত ঘটনা। ছাত্ররা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করবে এমনটা কখনো কাম্য নয়। ছাত্রদেরকে লেজুড়বৃত্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ছাত্ররা জ্ঞান-দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না। ফলে দেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিদেশিদের শরণাপন্ন হতে হবে। এটা কোনো অবস্থায় প্রত্যাশিত নয়।’
উল্লেখ্য যে, উপাচার্য আমিনুল হকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ১৩ এপ্রিল থেকে আন্দোলন শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরাম।
তাদের এ আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ‘অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তার চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে উপাচার্যের পক্ষে রয়েছেন সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের আরেকটি অংশ।
অচলাবস্থা কাটাতে দুই পক্ষের সঙ্গেই বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নিয়োগ, নতুন ব্যবস্থা চালু বা কাউকে নতুন কোনো পদে দায়িত্ব দিতে নিষেধ করে উপাচার্যের ক্ষমতা কার্যত খর্বও করা হয়েছে। তারপরও উপাচার্য পদ না ছাড়ায় শিক্ষকরাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
হামলার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে সোমবার (৩১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, কালো ব্যাজ ধারণ এবং প্রতিবাদ মিছিল করছে শিক্ষকরা।
‘এছাড়া উপাচার্য অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং তা আরও কঠোরতর হবে,’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মুখপাত্র সামসুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৩:১৪ ৩৬২ বার পঠিত