বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নে মাইলফলক স্থাপনে গত ছয় বছরের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দেশকে বদলে দিতে চান তিনি। ইতিমধ্যেই দেশের অবকাঠামোর ক্ষেত্রে একের পর এক বৃহৎ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যার বড় অংশ এখন দৃশ্যমান। ২০১৯ সালের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে চান পদ্মা সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলীতে টানেল, ঢাকা-চট্টগ্রামে নতুন নতুন ফ্লাইওভার, ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সংযোগে চার লেন, উড়ালসড়ক, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অর্থনৈতিক জোন, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনসহ উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর। শুধু তাই নয়, বেসরকারি খাতকেও উৎসাহিত করে উন্নয়নে গতি আনতে চান তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তদারকি করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মনিটরিং সেল। প্রয়োজনে বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে প্রকল্পের।জানা যায়, গত মেয়াদে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার করা উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যানে রাখা হয় বাংলাদেশের ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’-কে। প্রকল্পের কাজ এগিয়েও গেছে অনেকখানি। সব কাজ শেষে ২০১৭ সালের মধ্যে স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ পাঠানো সম্ভব হলে বাংলাদেশের নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। মিলিয়ন ডলার বেচে যাবে টেলিভিশন সম্প্রচার, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য কাজে এতদিন দেওয়া ভাড়া থেকে। আবার বিদেশিদের কাছে ভাড়াও দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের আরেকটি বৃহৎপ্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় ৬০ বছর আগের এই পরিকল্পনা একেবারে বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টিও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যানে বৃহৎ অংশ জুড়েই আছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের বাণিজ্যের হাবে পরিণত হতে পারে। গভীর সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের পর দ্বিতীয় অগভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হচ্ছে পায়রায়। সূত্র মতে, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির চিত্র পাল্টে দিতে একসঙ্গে বেশ কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যানে। একসঙ্গে পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরুও করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও আনোয়ারা, সিলেটের মৌলভীবাজার ও বাগেরহাটের মংলায় প্রথম চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে বিদেশিদের টাকায়, পঞ্চমটি হবে সিরাজগঞ্জে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। এ ছাড়া চীন, জাপান ও ভারতের মতো দেশের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক এলাকার পরিকল্পনাও আছে মাস্টারপ্ল্যানে। ইতিমধ্যেই দেশের সমুদ্র তীরবর্তী জেলা কক্সবাজারকে নিয়েও করা হয়েছে মহাপরিকল্পনা। এতে শুধু কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ অবহেলিত জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ছয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। টেকনাফের সাবরাংয়ে, জালিয়ার দ্বীপে দুটি ও মহেশখালীতে গড়ে তোলা হচ্ছে তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও একটি ফ্রি ট্রেড জোন। তৈরি হবে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সরাসরি সংযুক্ত হবে রেলপথে। কক্সবাজারের নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভই ভবিষ্যতে সরাসরি মিয়ানমার চীনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এখানেই নতুন পথ তৈরি করে যুক্ত করা হবে জাপানের বিগ-বি প্রজেক্টের মধ্যে। বাংলাদেশকে সরাসরি যুক্ত করবে চীন ও জাপানের সিল্করুট ও বিগবির সঙ্গে। জানা যায়, ব্যাবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের পরিধি বাড়ানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন হয় বিদ্যুৎ। এ কারণে মাস্টারপ্ল্যানে সবার আগে স্থান দেওয়া হয় বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোকে। তারই সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। ২০০৯ সালে যেখানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট সেখানে বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু বিনিয়োগ বাড়লে আরও চাহিদা বাড়বে তাই পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আরও বিদ্যুতের। সেজন্য সম্ভব সব সোর্স থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। মাতারবাড়ী ও রামপালে হচ্ছে দুটি বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বাইরে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগকেও মাস্টারপ্ল্যানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর মাস্টারপ্ল্যানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছিল সবার আগে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে একের পর এক ফ্লাইওভার, ওভারপাসসহ দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন আছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অন্যান্য প্রকল্প। হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রাজধানীবাসীর চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার পর এগিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোর লেনসহ সব প্রকল্প। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ফ্লাইওভার। যোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে জোর দেওয়া সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই এটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে সমুদ্র ভিত্তিক ব্লু-ইকোনমি। লক্ষ্য সাগরে বিশাল জলসীমায় থাকা বিপুল পরিমাণ সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার। তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা মানুষের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল সরকার। ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবাকেন্দ্র চালু করে এই সেবাকে মানুষের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন ইন্টারনেটে মূল্য কমানোকে নেওয়া হয়েছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যানে দেশের বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য নীতিমালা সংস্কারের চিন্তাভাবনাও আছে। যে কোনো ধরনের আইনি প্রতিবন্ধকতা দূর করার নির্দেশনাও আছে তার। মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের বা পিপিপির ধারণা প্রবর্তন করেছেন। আবার এতদিন ধরে থাকা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে সব স্তরে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫০:৩৭ ৩২৬ বার পঠিত