বঙ্গনিউজ ডটকমঃ সরকারে অনেকটা বিলীন হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দৃশ্যমান কোনো দলীয় কর্মসূচি বা সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। দায়িত্বশীল নেতারা দলীয় কার্যালয়েও যান না। দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা। সে সুযোগে অতি আওয়ামী লীগারদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলে মন্ত্রী-সাংসদদের ছত্রছাত্রায় হাইব্রিড, সুবিধাবাদী বা নব্য আওয়ামী লীগ বনে যাওয়া নেতারা এখন সামনের সারিতে।
কিন্তু এসব নেতা সাংগঠনিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের বিত্তশালী করার কাজে ব্যস্ত। তাঁদের দাপটে মূলধারার নেতাকর্মীরা ক্ষমতার বলয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যার দরুন বিভিন্ন স্থানে দলের চেইন অব কমান্ড অনেকটাই ভেঙে পড়ার উপক্রম।
তথ্যমতে, দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় অনেকটা নিষ্ক্রিয় দলীয় কার্যক্রম। কোণঠাসা বিরোধী শিবিরের কোনো তৎপরতা না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমতা উপভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য, তদবিরবাণিজ্য এবং টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত থাকায় সরকার ও দলের কর্মকাণ্ড অনেকটাই একাকার।
এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কোন্দলে নিষ্ক্রিয় দলীয় কার্যক্রম। প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্যের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীর ব্যাপক দূরত্ব। প্রতিটি এলাকায়ই বিরোধী দল নয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধেই ভুরি ভুরি অভিযোগ দলীয় নেতাদের। অধিকাংশ এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলীয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ চলেই আসছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ থাকার পরও এ বিরোধ নিরসন হয়নি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। যার ফলে কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে সমালোচনা করতে পারেন। তবে আমাদের দলের ভেতরে কোনো কোন্দল নেই।
এদিকে রাজধানীকেন্দ্রিক এক শ্রেণির নব্য আওয়ামী লীগারের তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়। এরা ভূঁইফোঁড় সংগঠনের ব্যানারে দিবসকেন্দ্রিক গোলটেবিল, আলোচনা সভা আয়োজন করে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। মূলত তারা এসব করে থাকে তদবিরের কাজগুলো করার জন্য। এরা নিজেদের ত্যাগী আওয়ামী লীগ কর্মী বা পদবঞ্চিত দাবি করলেও অনেকেই বিগত অন্যান্য সরকারের আমলেও একই কাজ করেছে। শুধু সরকারের সঙ্গে ব্যানার পরিবর্তন হয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। শীর্ষ পদধারীরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে সময় দিতে পারছেন না। রয়েছে এদের মধ্যে চরম গ্রুপিং। এ সুযোগে বাকি নেতারা ব্যস্ত ভোগ-বিলাসে। মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, তেজগাঁও থানার সভাপতি আসাদুজ্জামান খান কামাল মন্ত্রিসভায় রয়েছেন।
এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম, গুলশান থানার সভাপতি মো. টিপু মুন্সী, মিরপুর থানার সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার, পল্লবী থানার সভাপতি মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, শ্যামপুর থানার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা সরকারের কাজে বেশি ব্যস্ত থাকায় দলীয় কার্যক্রমে তেমন সময় দিতে পারছেন না। বাকি নেতাকর্মীরাও নিজেদের ভাগ্য বদলাতে মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্যদের বাসা বা অফিসে ভিড় জমান। যার বদৌলতে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নেই দীর্ঘ এ যুগেরও অধিককাল। সর্বশেষ ২০০৩ সালে জাজিরা উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দ্বারাই ঢিলেঢালাভাবে চলছে কার্যক্রম। দুই ধারায় বিভক্ত জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বাকিরাও বিভিন্ন শাখা-উপশাখায় যুক্ত হয়ে ব্যস্ত টেন্ডারবাণিজ্যে। বেশিরভাগ সময়ই দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকে। তবে কোনো কর্মসূচি থাকলে কার্যালয় খোলা হয়। দায়সারাভাবে তারা ওই কর্মসূচিও পালন করে। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে অর্থ আত্মসাতের দায়ে দুদকের মামলায় কারাগারে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রব মুন্সি। একই চিত্র চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল মহানগরীসহ প্রায় জেলা ও উপজেলাগুলোয়।
দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দায়িত্বে গেলে আর দলের খবর নেওয়ার সময় থাকে না। ব্যস্ত হয়ে পড়েন আখের গোছাতে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। দলীয় কর্মীরাও নিষ্ক্রিয়তায় পড়ে টেন্ডারবাজি নিয়ে বিবাদে জড়াচ্ছেন। এসব রোধ করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৭:৫৭ ২৪১ বার পঠিত