বঙ্গনিউজ ডটকমঃকিংবদন্তি একটি চলচ্চিত্রের নাম পথের পাঁচালী। ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট ছবিটি কলকাতায় মুক্তির আগে ১৯ আগস্ট প্রচারপত্রে লেখা হয়েছিল ‘অসামান্য গ্রন্থের অভাবনীয় চিত্ররূপ; পরিচালক : সত্যজিৎ রায়, সঙ্গীত : রবিশঙ্কর। মুক্তি দিবস : ২৬ আগস্ট।’ বুধবার ছবিটির ৬০ বছর পূর্ণ দিবস। গল্পের গাঁথুনি, নির্মাণশৈলী আর চমৎকার অভিনয়ে পথের পাঁচালী হয়ে উঠেছিল বিশ্ব দরবারে প্রথম স্বীকৃত বাংলা চলচ্চিত্র। অথচ এই সিনেমা নির্মাণের আগে সত্যজিৎ রায় নাকি প্রথম জীবনে কখনো পথের পাঁচালী পড়েননি। ‘আম আঁটির ভেঁপু’র ইলাস্ট্রেশন করার সময়ের ওইটুকু ভাগ পড়েই গল্পটি নিয়ে ছবি করার কথা ভাবেন তিনি। এটা আবার সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি। কেন ছবি নির্মাণের জন্য পথের পাঁচালীকে বেছে নেয়া- প্রশ্নের জবাবে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘সিনেমায় ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতম উপন্যাসগুলোর মধ্যে বাংলা সাহিত্যে পথের পাঁচালী অগ্রগণ্য। এই ছবির স্টাইলের আধার বিভূতিভূষণের লেখাটিই, কোনো বিশেষ আঙ্গিকের ছবি নয়।’
প্রবীণ চিত্রপরিচালক হাসান ইমাম বলেন, ‘পথের পাঁচালী তৈরি হয়েছিল তৎকালীন বাংলা বাণিজ্যিক ছবির সব রকম শর্তের বাইরে দাঁড়িয়ে। অপেশাদার অভিনেতা, স্টুডিও ফ্লোরের বাইরে আসল গ্রাম্য ক্যামেরা নিয়ে গিয়ে সেখানে সেট বানিয়ে, তাকে জীর্ণ চেহারা দিয়ে, অভিনেতাদের মলিন জামাকাপড় পরিয়ে অভিনয় করানো, এমনকি আসল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শুটিং করা তখন টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় রীতিমতো অভাবনীয় ব্যাপার ছিল।’ তিনি বলেন, ছবিটি নির্মাণের সময় সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল; ‘একটা লোক কয়েকজন বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে কী এক পাগলামো শুরু করেছে এবং অচিরেই যে তাদের সব চেষ্টা বিফল হবে, এমন ধারণা স্টুডিও পাড়ায় চাউর হয়ে গিয়েছিল।’
অপেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে কিভাবে কাজ করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পরিচালক। কলাকুশলীদের স্মৃতি থেকে তা জানা যায়। ছবিটির দুর্গা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উমা সেন। সম্প্রতি একটি পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি বেলতলা গার্লস স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ার সময় ছবির সহকারী পরিচালক আশিষ বর্মণ আমার নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে যান। পরে বাবার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রথম দিন আমার শট ছিল শক্তিগড়ের কাছে। সেই বিখ্যাত দৃশ্য যেখানে কাশবনের মধ্যে দিয়ে অপু-দুর্গা ছুটছে ট্রেন দেখার জন্য।’ উমা বলেন, ‘আরেকটা দৃশ্যের কথা সব সময়ই মনে পড়ে, টুনির পুঁতির মালা চুরি করার দায়ে যখন সবর্জয়া দুর্গাকে চুলের মুঠি ধরে মারে, মনে আছে দৃশ্যটা? উফ… সে কী যে মেরেছিল করুণাদি! আমার ঘাড়ের শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। দৃশটা ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে।’
অপু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আজ ৬০ হয়ে গেল অপু আমার শিরায়-শিরায় বয়ে চলেছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে কাকাবাবু (সত্যজিৎ রায়) বলতে থাকতেন, সামনে তাকাও, এবার একটু এগিয়ে যাও, ক্যামেরার দিকে তাকিও না, আচ্ছা এবার একটু দাঁড়িয়ে ডান পা-টা চুলকে নাও,… এবার এগোও। এর ফলে সহজে হয়ে যেত সব কিছু।’
১৯৫৬ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে পথের পাঁচালী শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল হিসেবে পুরস্কৃত হয়। সারা বিশ্বে ছবিটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তারপর থেকে আজ অবধি সিনেমার আইকন হিসেবে রয়েছেপথের পাঁচালী।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৭:৩৪ ৩৬০ বার পঠিত