বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
তারকাদের কাজ পর্দায় বা মঞ্চে। সেখানে তাদের উপস্থিতি আমাদের আনন্দিত করে, আহ্লাদিত করে। অনেক তারকা আবার সেখানেই তাদের কাজ শেষ বলে মনে করেন না। বরং পর্দা বা মঞ্চের বাইরেও করেন নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড। মানুষের সেবা, পৃথিবীর সেবা। অনেকে অবশ্য এই কাজ করেন স্রেফ পাবলিসিটি স্টান্ট হিসেবে। তবে অনেক তারকাই এই কাজগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য নয়, বরং পৃথিবীকে বদলানোর স্বপ্ন নিয়েই করেন। তাই তাদের উপার্জনের একটা বড় অংশই ব্যয় হয় এসব খাতে। তাদের সময়-শ্রমের একটা অংশও ব্যয় হয় এসব কাজে।
ব্র্যাঞ্জেলিনা : ব্র্যাড পিট এবং অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। জুটি হিসেবে তাদের পরিচিতি ব্র্যাঞ্জেলিনা। অভিনয়ের পাশাপাশি সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্যও তারা খবরের শিরোনাম হন প্রায়ই। বিশেষ করে শরণার্থী নিয়ে তারা বেশ সোচ্চার ও সক্রিয়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে তাদের কাজের জুটিও বেশ মজবুত। পাশাপাশি তারা জোলি-পিট ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে কাজ করছেন দারিদ্র্য দূরীকরণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষাসহ নানা মানবিক উদ্দেশ্যে। আর তাদের দত্তক নেয়া এক দল ছেলেমেয়ের কথা না হয় নাই-বা বলা হল।
পল ম্যাককার্টনি : কিংবদন্তি ব্যান্ড বিটলস-এর সদস্য পল ম্যাককার্টনি সেবামূলক কর্মকাণ্ডে খরচ করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এখনও করছেন। তিনি যুক্ত আছেন ৯০টারও বেশি সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। এর মধ্যে আছে গ্রিনপিস, ওয়ার চাইল্ড, এভরিওয়ান ম্যাটার্স-এর মতো সংগঠনগুলো। তবে তার সুদৃষ্টি বেশি পশু অধিকার ও সংরক্ষণ বিষয়ে। এই নিয়ে তিনি কাজ করছেন পেটা, হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল, এনিম্যাল ডিফেন্ডার্স ইন্টারন্যাশনাল, আমেরিকান ওয়াইল্ড হর্স প্রিজার্ভেশন ক্যাম্পেইন ইত্যাদির সঙ্গে।
এল্টন জন : ব্রিটিশ কিংবদন্তি গায়ক এল্টন জন কেবল দুই হাতে টাকা কামাননি, খরচও করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এইডস বিষয়ক গবেষণায় যারা সবচেয়ে বেশি দান করেছেন, তিনি তাদের একজন। তার কাছের কয়েকজন বন্ধু এইডসে মারা গেলে তিনি এই গবেষণায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। আশির দশকে গড়ে তোলেন এল্টন জন এইডস ফাউন্ডেশন। এর বাইরেও তিনি আরও প্রায় ৫০টা চ্যারিটি সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা দেন। সেগুলোর অনেকগুলোও এইডস নিয়ে কাজ করে। এছাড়াও আছে ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, গৃহহীন, ক্ষুধা, সামাজিক অধিকার, ক্যান্সার, উৎপীড়ন, সমকামিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনও।
বোনো : আইরিশ ব্যান্ড ইউটু-র অন্যতম সদস্য বোনো কেবল সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেই নয়, দাতাকর্ণ হিসেবেও বেশ প্রভাবশালী। বোনো সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন আশির দশক থেকে। ১৯৮৬ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যখন কন্সপিরেসি অফ হোপ ট্যুরের আয়োজন করে, তাতে অংশ নেয় বোনোর ব্যান্ড ইউটু। পরে বোনো মানুষের অধিকার, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, এইডস বিষয়ক গবেষণা ও সচেতনতা, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ শুরু করেন। এইসব সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি তিন বার শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারের জন্য প্রাথমিক মনোনয়ন পান।
এলেন : মার্কিন কমেডিয়ান-উপস্থাপিকা এলেন নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সেসবের মধ্যে আছে ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, উৎপীড়ন বন্ধ করা ইত্যাদি। পাশাপাশি সুজান কোমেন ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গে থেকে তিনি বেশ জোরেসোরেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। বিশেষ করে তার দ্য এলেন শো-তে প্রতি অক্টোবর মাসে তিনি এ বিষয়টি নানাভাবে নিয়ে আসেন। কাজ করছেন পশু অধিকার ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়েও। যুক্ত আছেন দ্য হিউম্যান সোসাইটি অফ ইউনাইটেড স্টেটস, বিগ লাইফ ফাউন্ডেশন, হ্যালো পেট ফাউন্ডেশন, ফার্ম স্যাংকচুয়ারি-র মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গেও।
অপরাহ উইনফ্রে : অপরাহ উইনফ্রে আর সেবামূলক কর্মকাণ্ডকে বলা যেতে পারে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বিখ্যাত টিভি উপস্থাপিকা তার টিভি অনুষ্ঠানে নিয়মিতই এসব ইস্যুগুলো নিয়ে আসেন। আর এসব খাতে টাকা খরচ করার বেলাতেও তিনি উদারহস্ত। তিনি সবচেয়ে বেশি খরচ করেছেন নাগরিক অধিকার, ত্রাণ ব্যবস্থাপনা এবং রোগ নিরাময়ের পেছনে। এছাড়াও কাজ করছেন শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধ, শিক্ষা, আবহাওয়া ও পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে। গড়েছেন দ্য এঞ্জেল নেটওয়ার্ক, দ্য অপরাহ উইনফ্রে ফাউন্ডেশন, দ্য অপরাহ উইনফ্রে অপারেটিং ফাউন্ডেশন-এর মতো সেবামূলক সংগঠন।
জর্জ ক্লুনি : এই মার্কিন অভিনেতার খ্যাতি মূলত ইন্টারন্যাশনাল প্লেবয় হিসেবে। তবে প্রেম-ফ্রেমের বাইরে সেবামূলক কর্মকাণ্ডেও তিনি কম যান না। তার সেবামূলক কর্মকাণ্ডগুলোর বড় অংশই গৃহহীন, ক্ষুধা ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নট অন আওয়ার ওয়াচ নামের সংগঠন। আফ্রিকার মানুষদের অধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছেন তিনি। কাজ করছেন সেখানকার সুদান, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সোমালিয়া এবং লর্ডস রেসিস্ট্যান্স আর্মির দখলে থাকা অঞ্চলে। এছাড়াও যুক্ত আছেন ফিডিং আমেরিকা, সেভ দ্য চিল্ড্রেন এবং স্ট্যান্ড-আপ টু ক্যান্সার-এর সঙ্গেও।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪১:৩৩ ৪৩২ বার পঠিত