বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন) করেছেন। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী কামরুজ্জামান রনি এ তথ্য জানান।
কামরুজ্জামান রনি বলেন, কর্মীসভায় অংশ নিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কাজী জাফরের কুমিল্লা যাওয়ার কথা ছিল। সকাল পৌনে সাতটার দিকে তাঁর সাড়া না পেয়ে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পরিবারের বরাত দিয়ে কাজী জাফরের ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ডায়াবেটিস ও কিডনিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাজী জাফরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়া নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে ২০১৩ সালের শেষ দিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে কাজী জাফরকে বহিষ্কার করেন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এরশাদকে পাল্টা বহিষ্কারের ঘোষণা দেন কাজী জাফর। এরপর থেকে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান তিনি।
একইভাবে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে নতুন দল জাতীয় পার্টি (জা-মো) গঠন করেন কাজী জাফর। তখনো দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। বছর খানেক পর আবারও দলে ফেরেন।
নানা কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত কাজী জাফর।
ষাটের দশকের শুরুতে তিনি অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময় যুক্ত হন শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে।
১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। টঙ্গী অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে শ্রমিকদের সংগঠিত করার ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিল।
মাওপন্থী নেতা কাজী জাফর এক সময় সঙ্গী হন জিয়াউর রহমানের। সামরিক শাসককে রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার খাতিরে তল্পিবাহক রাজনৈতিক দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি গড়েন তিনি। পরে জিয়াউর রহমান ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন করলে ছিটকে পড়েন কাজী জাফর।
১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে সাত দলভুক্ত ইউপিপির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কাজী জাফর এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘স্বৈরাচারী এরশাদের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।’ টেনেহিঁচড়ে এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামানোরও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে সুনামগঞ্জ বিএনপির নেতা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে ‘এরশাদের গোয়ালে আরেকটি রাম ছাগল যোগ দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন কাজী জাফর। ওই বক্তব্যের পরদিনই সেই ‘গোয়ালে’ই যোগ দেন কাজী জাফর।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের পর একসময় কাজী জাফরকে প্রধানমন্ত্রী করেন এরশাদ। ১২ আগস্ট ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
১৯৮৮ সালে বন্যার্ত মানুষের জন্য বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি টাকার চিনি বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কাজী জাফরের বিরুদ্ধে। মন্ত্রী থাকার সময়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের দায়ে ১৯৯৯ সালে ১৫ বছরের সাজা হয়েছিল তাঁর।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর কারাবন্দী থাকা অবস্থায় জামিন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন কাজী জাফর। পরবর্তী সময় সেখানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ায় সে দেশের গণমাধ্যমের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল অস্ট্রেলীয় সরকার। শরণার্থী হয়ে পাক্ষিক ৩৭০ ডলার ভাতাও পেতেন তিনি। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কাজী জাফর আহমদ কীভাবে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিলেন, সে রহস্য খুঁজে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে যাচ্ছিলেন কাজী জাফর। মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে সরিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে একত্র করার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১২:৫১ ২৯৫ বার পঠিত