বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ঢাকার বিভিন্ন বাজার এবং অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইটে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে স্যামসাংয়ের নকল স্মার্টফোন। দামি স্মার্টফোনগুলোর নকলই মূলত দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অ্যাপলের আইফোন এবং স্যামসাংয়ের বিভিন্ন মডেলের নকল ফোন প্রকাশ্যে, এমনকি নকল ঘোষণা দিয়েই বিক্রি হচ্ছে। নকল হওয়া স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের ফোনের সংখ্যাই বেশি। তবে সনি ও এইচটিসির দু-একটি মডেলের স্মার্টফোনের নকলও বাজারে দেখা যায়। ঢাকার বাজারে নকল আইফোন নিয়ে গত ২৯ জুলাই প্রথম আলোর ‘কম্পিউটার প্রতিদিন’ বিভাগে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছিল।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং কেনাকাটার ওয়েবসাইট দেখে জানা গেল কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি নকল ঘোষণা করেই এসব ফোন বিক্রি হয়। আবার কিছু বিক্রেতা আসল বলেও গছিয়ে দেন নকল স্যামসাং স্মার্টফোন। নকল আইফোনের মতো স্যামসাংয়ের নকল স্মার্টফোনগুলোও তৈরি হয় চীনে।
এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, নকল স্যামসাং স্মার্টফোন বেশি আসে। কারণ বাংলাদেশ এসব ফোনের চাহিদা বেশি। কখনো কখনো ধরাও পড়ে। সাধারণত পণ্যবাহী (কার্গো) বিমানে অন্য পণ্য হিসেবে দেখিয়ে এসব নকল ফোন আনা হয়।
একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি গ্র্যান্ড-২, গ্র্যান্ড প্রাইম, এস-৪, এস-৫ ও এস-৬ মডেলের নকল ফোন বাজারে বেশি পাওয়া যায়। এসব ফোন ৮ থেকে ১৩ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। সনির জেড, জেড টু, জেড থ্রি, জেড ফোর ও জেড আল্ট্রার নকলও পাওয়া যায় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায়। এইচটিসির এম ৮, এম ৯, ৮১৬, ৮২০ ও ৮২৬ মডেলের নকল স্মার্টফোন পাওয়া যায় ৫ থেকে ৯ হাজার টাকায়।
নকল স্যামসাং স্মার্টফোন বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায়-ই নেই যে এগুলো আসল নয়। নকল ফোনগুলো মূলত ইন্টারনেটে শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনভিত্তিক ওয়েবসাইটে আসল বলে বেশি বিক্রি করা হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মোবাইল ফোন আমদানিকারক জানান স্যামসাংয়ের লোগো-সংবলিত এই স্মার্টফোনগুলোর কেসিং ও ব্যাটারি থাকে নকল। এমনকি ফোনের বাক্সও হুবহু নকল করা হয়। পরে আসল স্যামসাং ফোনের সঙ্গে মিলিয়ে সফটওয়্যার ও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ভরে দেওয়া হয়ে। নকল সনি ও এইচটিসির ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করা হয়। নকল স্যামসাং ফোন বড় বড় শহরসহ জেলা ও উপজেলায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর একটি হাসপাতালের সেবিকা বীথি শ্যামলী এলাকার এক দোকান থেকে সনির জেড সিরিজের একটি ফোন আসল ভেবেই কিনেছিলেন কিছুদিন আগে। কেনার কয়েক দিন পর জানতে পারেন এটি আসলে নকল সেট। ততক্ষণে সেটির কার্যক্ষমতাও কমে গেছে।
নকল ফোন নিয়ে স্যামসাং বাংলাদেশের বিপণন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক তাহসিন রাফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্যামসাংয়ের নকল পণ্য আসল বলে বিক্রি করছে। আমরা সব সময় ক্রেতাদের স্যামসাংয়ের অনুমোদিত বিক্রেতার কাছ থেকে ফোন কেনার পরামর্শ দিই। এতে তাঁরা ওয়ারেন্টিও পেয়ে থাকেন। এরপরও কারও কাছে যদি কখনো স্যামসাংয়ের কোনো ফোন নিয়ে সন্দেহ হয় তবে আমাদের কলসেন্টারে ফোন (নম্বর: ৯৮৮৪২১৩-৪) করে বাক্সের গায়ে থাকা সিরিয়াল নম্বর জানালে আমরা বলে দিত পারব এটা আসল পণ্য কি না। আমরা মনে করি, নকল স্মার্টফোন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
নকল স্যামসাং ফোন চিনবেন যেভাবে
পর্দার চারপাশে একটি কালো আকৃতির খালি অংশ থাকে।
আসল স্মার্টফোনের হোম বাটনটি পর্দার নিচে খুব কাছাকাছি থাকবে। নকলগুলোতে একটু নিচে থাকে, যা খেয়াল না করলে বোঝা যায় না।
নকল ফোনে স্যামসাংয়ের লোগোতে নখ বা অন্য কিছু দিয়ে আঁচড় কাটলে সেটি উঠে যায়।
নকল স্মার্টফোনের প্যাকেটের সঙ্গে সাধারণত একটি ফ্লিপ কভার বিনা মূল্যে দেওয়া হয়, যা আসল ফোনের সঙ্গে থাকে না।
ওপরের পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করেও যদি বুঝতে না পারেন যে সেটি আসল না নকল ফোন সে ক্ষেত্রে ‘এলসিডি টেস্ট’ করে নিতে পারেন। ফোনটিতে *#০*# চাপুন। ফোন আসল হলে সঙ্গে সঙ্গে পর্দায় এলসিডি টেস্ট দেখা যাবে। নকল সেটে এটি কখনোই আসবে না।
আসল ফোনে *#১২৩৪# চাপলে ভার্সন এপি, সিপি ও সিএসসি সিরিয়াল নম্বর, *#০ *# চাপলে জেনারেল টেস্ট মোড এবং *# ০২২৮# দিয়ে ব্যাটারি স্ট্যাটাস দেখা যাবে। নকল ফোনে এসব ‘কোড’ কাজ করে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৭:৪৩ ৩১২ বার পঠিত