খালেদার সামনে দুর্গম পথ

Home Page » প্রথমপাতা » খালেদার সামনে দুর্গম পথ
মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট ২০১৫



Image result for খালেদার সামনে দুর্গম পথবঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাজনীতির ইতিহাসে চরম দুঃসময় পার করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একদিকে দলে ভাঙনের ষড়যন্ত্র ও দল পুনর্গঠনে স্থবিরতা, অন্যদিকে মামলার স্তূপে চাপা পড়া দলের শীর্ষ নেতাদের সাজার শঙ্কা। পাশাপাশি নিজেরও বেশ কয়েকটি বিচারাধীন মামলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি। এছাড়া দলের ভেতর অন্তর্কোন্দল তো আছেই। এসব সমস্যা নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিতে সরকারের দালালদের উৎপাত ক্রমেই বাড়ছে। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে দলটিকে ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন তাঁরা।

এদের চিহ্নিত করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে চরম বিপাকের মুখে পড়তে পারে দলটি। যার ফলে দলীয় বৈঠকে কোনো কর্মসূচি বা আন্দোলনের কথা উঠলেই তাঁরা সেই পথ থেকে ফিরে আসতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষোভের অন্ত নেই খালেদা জিয়ার। নেতারা একের পর এক দলীয় আচরণবিধি ভঙ্গ করে দলের বিরুদ্ধে নানা বিরূপ মন্তব্য করে দলকে বেকায়দায় ফেলছেন। এছাড়া দলীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় কোনো কর্মসূচি দিয়েও তার সুফল ভোগ করা যাবে না। তাই দলীয় কোনো কর্মসূচিও দেওয়া হচ্ছে না। দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই মামলার স্তূপ মাথায় নিয়ে শ্রীঘরে বাস করছেন। তাঁদের কারো কারো সাজা হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে পাঁচটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন, সেগুলোতেও সাজা হওয়ার শঙ্কা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো লক্ষণ নেই। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পাচ্ছে না বিএনপি। এ অবস্থায় ঘরে-বাইরে চরম চাপের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তবে দু’দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে খালেদা জিয়া নিজেই দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৪ মাসেও পুনর্গঠনের কাজ একেবারে হয়নি বললেই চলে। কাজের মধ্যে শুধু ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের সব কমিটি করার নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টার পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কৌশল ঠিক করলেও বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে দলটি। সরকারের কৌশলের কাছে তাদের রীতিমত নতিস্বীকার করতে হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টানা ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এ কর্মসূচি চলাকালে বাসা ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তিনি দফায় দফায় হরতাল ঘোষণা করেন। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমাসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ও সহস্রাধিক লোক মারাত্মক আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সহস্রাধিক যানবাহনসহ অনেক স্থাপনা। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের জান-মালের ক্ষতিসাধন ছাড়া বিএনপির কোনো সফলতা ছিল না।

বিগত আন্দোলনের কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় আবার নতুন করে দল গোছানোর পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। আবার নতুন করে সুর বদল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন থেকেও সরে এসেছেন তিনি।

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বলব না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। যে নামেই হোক, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন চাই।’

অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে প্রায় পাঁচ বছর ধরে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতেই অটল ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গত বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেন তিনি। এমনকি বিএনপির জোটবন্ধু জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচন থেকে দূরে থাকে। যার ফলে একূল-ওকূল সব কূলই হারাতে বাধ্য হয় বিএনপি।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপিকে এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। সেই নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতায় না যেতে পারলেও অন্তত সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকতে পারত। সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দিয়ে এখন নিজেরাই বড় বেকায়দায় পড়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েই চলেছে।

এসব অভিযোগে অনেকেই এখন কারাবাস করছেন। এমনকি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিএনপি কোনো ধরনের সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রভাবশালীদের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টাও ব্যর্থ হয় বিএনপির। ফলে একের পর এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে দলটিকে।

এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলোর গতি-প্রকৃতি নতুন দিকে মোড় নেওয়ায় তাঁর সাজা হওয়ার আশঙ্কা থেকে দলে বিপর্যয় মাথাচাড়া দিয়েছে। এছাড়া নাশকতা মামলাসহ অন্য মামলাগুলো নিয়েও সাজা আতঙ্ক রয়েছে। খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের সিনিয়র এবং মধ্যসারির অনেক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত মামলা। এসব মামলায় অনেক নেতার দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজা হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

এ বিষয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা রাজনৈতিক। এগুলোর তেমন কোনো ভিত্তি নেই। সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে এই মামলাগুলোর মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’

মামলার ঝামেলা ছাড়াও দলে ভাঙন রোধে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি খালেদা জিয়া। বিএনপিতে সুবিধাবাদী অনেক নেতা আছেন যাঁরা বিগত সময়ে এর প্রমাণও রেখেছেন। ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য অনেকে দফায় দফায় দল পরিবর্তন করতে এবং শর্তসাপেক্ষে আপস করতেও দ্বিধা করেননি। বাহ্যিকভাবে দলের পক্ষ থেকে ভাঙন নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই বলে জানানো হলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়া চিন্তিত বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ভোরের পাতাকে বলেন, ‘অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার মামলা-হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। জন্মের পর থেকেই দলটিকে ভাঙার নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু তাতে কেউ সফল হননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে নানা ষড়যন্ত্র করছে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৫:১৪   ৪১৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রথমপাতা’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ