বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
এইটুকুন বয়স। তাতে কী? বড়দের মতো কাজ। অসাধারণ সব উদ্ভাবন। বিজ্ঞান পড়া শুধু নয়। বিজ্ঞানের যে জ্ঞান, তার চমৎকার ব্যবহার। স্কুল-কলেজের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা কত কী যে আবিষ্কার করে দেখিয়েছে। সেইসঙ্গে ছিল স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানীদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন। আলু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাতি জ্বালিয়ে বিজ্ঞান মেলায় সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মিরসরাইয়ের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান মেলায় আলু থেকে বিদ্যুত আবিষ্কারক মঘাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের ক্ষুদে বিজ্ঞানী ইমন, আসিফ বিশ্বনাথ, সাকিব ও প্রসেনজিত জানিয়েছেন, আলুর ভেতরে থাকে প্রচুর পরিমানে সৌরো শক্তি যেটি কাজে লাগিয়ে অনায়াসে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আলু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি এলইডি বাল্ব জ্বালাতে ১০টি আলু, জিংকের পাত, ১০টি তামার পাত ও সামান্য তার ও দুটি আলাদা ধাতব দন্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ধাতব দন্ডের মধ্যে একটি অ্যানোড বা (নেগেটিভ) এবং অন্যটি ক্যাথোড বা পজেটিভ। এরপর দন্ড আলুর দুই প্রান্তে গেথে আর দন্ডের অপর প্রান্তের সাথে দুইটি পরিবাহী লাগানো হয়েছে। পরবর্তীতে অ্যাসিডিক পদার্থকে সংশ্লেষনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়েছে। যা এর আগে কেউ ভাবেনি, আবিষ্কারও করেনি। শিক্ষার্থীদের এমনই ৪৮টি প্রজেক্ট নিয়ে জমে উঠেছিলো বিজ্ঞান মেলা। যা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দর্শনার্থীরা।
সোমবার প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের আয়োজনে অধ্যক্ষ নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে ও গণিতের প্রভাষক কামাল উদ্দিনের সার্বিক তত্বাবধায়নে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন করেন ক্লিপটন গ্রুপের পরিচালক মহিউদ্দিন চৌধুরী। দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত মিরসরাইয়ের আবুতোরাবে প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষে দিনভর উৎসবমুখর ছিল পুরো ক্যাম্পাস।
এছাড়া মেলায় উপস্থিত ছিলেন নিজামপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিক উদ্দিন, উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মফিজ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ, অধ্যাপক নাসির উদ্দীন, জেবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া, সহকারী প্রধান শিক্ষক সুভাষ সরকার, জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, মেশকাত হোসেন চৌধুরী মির্জা, সামসুদ্দীন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম।
জৈব কীটনাশক, সেফটি ব্রীজ, সিকিউরড হাউস, ভূমিকম্প নির্দেশক, পানির ফিল্টার, ভ্যলেন্ডার মেশিন তৈরী, আলু থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন, বায়ু বিদ্যুৎ, সলিনয়েড, সোলার ওভেন, এয়ার বোট, ছাই থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন, স্পিড বোর্ড, লেবু থেকে বিদ্যুৎ, পাথর কুচি থেকে বিদ্যুৎ, রিমোট কন্ট্রোল জাহাজ, ফায়ার ডেন্জার এলার্ম, পাইলট বিহীন হেলিকপ্টর, হাইড্রোলিক ব্রীজ, ড্রোন বিমান সহ মোট ৫০টি প্রোজেক্টের মধ্যে তাক লাগিয়ে দেয় হাইড্রোলিক ব্রীজ, পাইলট বিহীন বিমান, আলু দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, চাই থেকে বিদ্যুৎ ও সোলার ওভেন।
কলেজ পর্যায়ে প্রথম হয় প্রফেসর কামাল উদ্দীন চৌধুরী কলেজ। প্রজেক্ট ছিল বায়ু চাপের ব্যবহার ও বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন- দলনেতা শরীফুল ইসলাম এবং নাইমুল হাসান। ফায়ার এলার্ম সার্বিস নিয়ে প্রফেসর কামাল কলেজ থেকে দ্বিতীয় হয় সাগর। স্পিড বোর্ড নিয়ে তৃতীয় হন জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে ফারহানা কাউসার। স্কুল পর্যায়ে প্রথম হয় জেবি উচ্চ বিদ্যালয় সেফটি ব্রীজ নিয়ে। জৈব কীটনাশক নিয়ে জেবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২য় হয় তাসনিন জাহান মিতু। ছাই দিয়ে বিদ্যুৎ প্রজেক্ট নিয়ে ৩য় হয় আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের সালাউদ্দিন।
বিজ্ঞান মেলায় ২টি দলে ১৬৭জন ক্ষুদে বিজ্ঞানী অংশ গ্রহন করে। মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলার ৭টি স্কুলের ১০১জন বিজ্ঞানীরা মোট ৩৪টি প্রকল্প উপস্থাপন করে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২টি কলেজের ৫৬জন বিজ্ঞানী ১৪টি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে।
প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজে অধ্যক্ষ নুরুল আবছার জানান, নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে তৈরি প্রজেক্টগুলো শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। যার মধ্য দিয়ে তারা জানান দিয়েছে, সুযোগ পেলে তারাও পাল্টে দিতে পারে বিশ্বকে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য, বিশ্বের জন্য তারাও আবিষ্কার করতে পারেন নতুন কিছু। আগামী দিনের নাগরিকদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা, ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আরও উৎসাহ দেয়া, মেধার যথার্থ স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন আবিষ্কারের সুযোগ করে দেয়াই ছিল মেলার উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৮:১১ ৪৮৭ বার পঠিত