বঙ্গনিউজ ডটকমঃ
ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হজযাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৭ হাজার ৬৩০ জন হজযাত্রী ভিসা পাননি। ভিসা না পাওয়ায় আশকোনা হজক্যাম্পের মেঝেতে শুয়ে-বসে সময় পার করছেন এসব হজযাত্রী। সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না হজযাত্রীদের। নানা জটিলতায় প্রতি বছরই অসংখ্য হজব্রত পালনে ইচ্ছুক অপেক্ষমাণ যাত্রী শেষ পর্যায়ে এসে হজে যেতে পারেন না। এবার নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ই-ভিসা। এ কারণে এবার প্রায় ২৭ হাজার হজযাত্রীর নির্দিষ্ট সময়ে সৌদি আরব পেঁৗছা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
হজ নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সৌদি আরবের ই-হজের ওয়েবসাইটে ছবি আপলোডের জটিলতায় ভিসা প্রিন্ট দিলে সেখানে হজযাত্রীর ছবি দেখাচ্ছে না। আবেদনের সব পর্যায় সম্পন্ন করার পরও ভিসা ছাড়া পাসপোর্ট ফেরত আসায় হজ গমনেচ্ছুদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এ নিয়ে দেশের কয়েকটি স্থানে এজেন্টদের মারধর ও অফিস ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। অনলাইনে ভিসা আবেদন করার সময় ছবি ও ভিসা-সংক্রান্ত তথ্য পূরণে ত্রুটি থাকায় পাসপোর্টে সৌদি ভিসা লাগেনি। ফলে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে হজে যেতে পারছেন না। এ জন্য হজ মন্ত্রণালয় ও সৌদি দূতাবাসের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করা হচ্ছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা দিতে না পারলে একই পরিবারের সদস্যদের আলাদা ফ্লাইটে যেতে হবে। অনেক যাত্রী হজে যেতে পারবেন না। হাজিদের বিমান ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হবে। এ নিয়ে সরকারের ৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় হজযাত্রীদের দ্রুত ভিসা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও আশঙ্কা করছেন, ফ্লাইট খালি গেলে বা বাতিল হলে ফ্লাইট সূচিতে বিপর্যয় ঘটবে। ফলে হজযাত্রী এবং সরকার উভয়ের ক্ষতি ও ভোগান্তি হবে।
দেখা গেছে, একই পরিবারের দু’জন ভিসার আবেদন করলেও ই-ভিসা জটিলতার কারণে একজনের ভিসা লেগেছে, আর অন্যজনের ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত পাঠানো হয়েছে। আবার অসুস্থ মায়ের সঙ্গে যাওয়ার জন্য ছেলে আবেদন করলেও ছেলের পাসপোর্টে ভিসা লেগেছে; কিন্তু মায়ের পাসপোর্টে ভিসা লাগেনি। হজযাত্রীর অভাবে বিমানের ফ্লাইট বাতিল পর্যন্ত করতে হচ্ছে। সিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখা আসনও খালি যাচ্ছে। ভিসা না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছাড়বে কি-না সে নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন আশকোনা হজক্যাম্পে আসা হজযাত্রীরা।
গত রোববার সন্ধ্যায় ফ্লাইট ছিল ময়মনসিংহের ফুলপুরের হজযাত্রী আবু বক্কর সিদ্দিকের। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় তার যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ভিসা কবে পাব আর কবে যাব, তা এখনও জানি না। বাইরেও কোনো আবাসিক হোটেলে উঠতে পারছি না, কারণ আমাদের পাসপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
হজযাত্রীদের ভিসা না পাওয়ার বিষয়ে বেসরকারি এজেন্সি সোনার মদিনা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরসের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, এই এজেন্সির মাধ্যমে ২২১ যাত্রী পবিত্র হজ পালনের জন্য যাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যাত্রীদের ভিসা হাতে পাওয়া যায়নি।
হজ পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণে ভিসা পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যাচ্ছে না। পাসপোর্টে ছবি না লাগা-সংক্রান্ত জটিলতাই এর মূল কারণ। কারিগরি ত্রুটি সারানোর জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার আশকোনায় হজক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মেঝেতে শুয়ে-বসে সময় পার করছেন যাত্রীরা। সরকারিভাবে যেসব হজযাত্রীর ফ্লাইট সিডিউল পরিবর্তন হয়েছে, তাদের ভাবনার কিছু নেই। তাদের যাওয়ার সব ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে।
হজক্যাম্প থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারিভাবে হজ পালনের জন্য এরই মধ্যে এক হাজার ৯৫৭ জন জেদ্দায় পেঁৗছেছেন। সরকারিভাবে গেছেন ৮২৯ জন, আর বেসরকারিভাবে ১ হাজার ১৩৮ জন।
হজক্যাম্পের তথ্যকেন্দ্রের ইনচার্জ মো. কবির আল মামুন জানান, পবিত্র হজ পালনে সরকারিভাবে যেসব যাত্রীর যাওয়ার কথা রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ জন ভিসা জটিলতায় পড়েছেন।
এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জনের হজ পালনের কথা রয়েছে। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ২ হাজার ৭০০ জন। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এ বছরের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
হজে যাওয়া অনিশ্চিত সিলেটের ১২৬২ জনের সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিয়েও হজে যেতে পারছেন না সিলেটের ১২৬২ জন হজযাত্রী। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ডাটা এন্ট্রি না হওয়ায় তারা এ বছর হজ পালন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সংশিল্গষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। অবৈধভাবে ডাটা এন্ট্রি করে রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশন ট্রাভেলস এজেন্সি অব বাংলাদেশ-আটাব সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ১৭৫৮ জন হজ করতে সৌদি আরবে যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৬০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৯ হাজার ১৫৮ জন। এ বছর ২৬ ফেরুয়ারির মধ্যে হজে গমনেচ্ছুদের টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু ৪ দিন আগেই ২২ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় ডাটা এন্ট্রি বন্ধ করে দেয়। যে কারণে ২২ তারিখের পরে জমা দেওয়া হজে গমনেচ্ছুদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, অসাধু কিছু ট্রাভেলস ব্যবসায়ীর যোগসাজশে নির্ধারিত সময়ের ৪ দিন আগেই ডাটা এন্ট্রি বন্ধ করে অবৈধভাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যে কারণে বৈধ উপায়ে আবেদনকারীদের নাম বাদ পড়ে যায়। এতে সিলেটের ১ হাজার ২৬২ হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশন ট্রাভেলস এজেন্সি অব বাংলাদেশ-আটাবের সিলেট জেলা সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল সমকালকে বলেন, সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিয়েও সিলেটের ১২৬২ জন হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ডাটা এন্ট্রি করে রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অনৈতিক সুবিধার কারণে এ সমস্যায় পড়তে হয়েছে হজে গমনেচ্ছুদের। ইতিমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:২০:১৫ ৩৭১ বার পঠিত