বঙ্গনিউজ ডটকমঃ আন্তর্জাতিক বাজারে বড় দরপতনের কারণে দেশের বাজারেও সোনার দাম কমেছে। এখন ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ৪১ হাজার ৭৫৭ টাকা। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি ছিল ৪১ হাজার ২৩২ টাকা। তার মানে মূল্যবান এই ধাতু পাঁচ বছর আগের দরে ফিরে গেছে। অবশ্য এ সময়ে দর ওঠানামা করেছে ৬৪ বার।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশের বাজারে সোনার দর সংশোধনের কাজটি করে আসছে। তবে বিশ্ববাজারে যে পরিমাণে দর কমে, সেই হারে সোনার দাম কমায় না সমিতি। সর্বশেষ ৬ আগস্ট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ২২৪ টাকা কমিয়েছিল সমিতি।
আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি স্বস্তিদায়ক মনে হলেও বাংলাদেশের ক্রেতারা কিন্তু ঠকছেন। কারণ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেটে গত বৃহস্পতিবার বিশুদ্ধ বা ২৪ ক্যারেট সোনার প্রতি আউন্সের (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সর্বশেষ দর ছিল ১ হাজার ১১২ মার্কিন ডলার ৯০ সেন্ট। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে হয় এক ভরি। তার মানে প্রতি ভরি ৪১৭ ডলার ৩৪ সেন্ট। দেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৩৮৭ টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে)। ২৪ ক্যারেট সোনার বারে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া যায়। আর ২২ ক্যারেটের ক্ষেত্রে মেলে ৯১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সেই হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ২২ ক্যারেট সোনার দাম হবে ভরিপ্রতি ৩০ হাজার ৫৮৫ টাকা। আর দেশের বাজারে এই মানের সোনা বিক্রি হচ্ছে ভরিপ্রতি ৪১ হাজার ৭৫৭ টাকায়। তার মানে ক্রেতাকে প্রতি ভরিতে ১১ হাজার ১৭১ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় বৃহস্পতিবার ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ২৮ হাজার ৫৭৬ রুপিতে বিক্রি হয়। দেশি মুদ্রায় যা ৩৪ হাজার ২৯১ টাকার সমান।
আন্তর্জাতিক ও দেশি বাজারে সোনার দামের ব্যবধানের বিষয়ে জুয়েলার্স সমিতির নেতারা সব সময়ই সাংবাদিকদের বলেন, দেশে বৈধভাবে সোনা বেচাকেনার কোনো বাজার নেই। এ ক্ষেত্রে ভরসা লাগেজ পার্টি। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ওঠানামা করলেও সুফল পাওয়া যায় না।
অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুয়েলার্স সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘গত রমজান মাসে দেশের বাজারে সোনার দাম সংশোধন করার বিষয়ে প্রস্তাব দিলেও সমিতির অধিকাংশ সদস্য একমত হননি। তাই ব্যবধানটা অনেক বেশি হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে সোনার পাশাপাশি অলংকার তৈরির মজুরি ও অন্যান্য খরচের একটি অংশ হিসাব করেই দামটি নির্ধারণ করা হয়। কারণ প্রতি গ্রাম অলংকার তৈরির জন্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মজুরি আলাদাভাবে ক্রেতার কাছ থেকে জুয়েলার্সগুলো নিয়ে থাকে। শুধু এতে পোষায় না।’
জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈধভাবে সোনা কেনার সুযোগ আমাদের দেশে নেই। পুরোনো অলংকার থেকেই পাকা সোনার চাহিদার একটা বড় অংশ আমরা পাই। লাগেজ পার্টির মাধ্যমেও কিছু আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক ভরি অলংকার তৈরি করতে কারিগরকে দুই আনা সোনা দিতে হয়। না হলে তারা পাইন ছাড়া ক্যাডমিয়ামের কাজ করতে চায় না। তা ছাড়া আয়ের ওপর ৭ শতাংশ করে সরকারকে কর দিতে হয়। অলংকার তৈরির হিসাব করেই আমরা সোনার দর নির্ধারণ করি।’
তারপরও আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারে সোনার দামের এত ব্যবধান নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কি না—জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সোনার দাম কম হলে তো ব্যবসায়ীদেরই লাভ। কারণ, তখন ক্রেতারা বেশি বেশি অলংকার তৈরি করাবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সব সময়ই দাম সংশোধন করি। তবে ভবিষ্যতে দামের ব্যবধানটি কমানোর বিষয় নিয়ে আমরা কমিটির বৈঠকে আলোচনা করব।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৭:২৫ ৭৪২ বার পঠিত