বঙ্গনিউজ ডটকমঃ যারা ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করার কথা বলছেন-তাদের একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে, যারা এখন এ কথা বলছেন তারা সামরিক শাসকদের উপদেষ্টা ছিলেন কিংবা তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তখন তাদের চেতনা কোথায় ছিল সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরে তথ্য ভবনের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আলোচনায় অনেকে দেশে কোনো গণতন্ত্র দেখেন না, সংবিধান সংশোধনের জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন, অনেক কিছু বলেন…আমি যখন এই মুখগুলো দেখি…তাদের কেউ একসময় সামরিক শাসকদের উপদেষ্টা ছিলেন, কেউ কেউ তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, কেউ তাদের পদলেহন করেছেন, একটি চাকরি পাওয়া, একটু অনুকম্পা লাভের ও একটু করুণার জন্য ধরনা দিয়েছেন। তখন তাদের চেতনার দুয়ার বন্ধ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দুয়ার খুলে দেওয়ায় সুশীল সমাজের ওইসব সদস্যের গণতান্ত্রিক চেতনা ও প্রস্তাব-আকাঙ্ক্ষা বেড়েই চলছে। তারা যত গণতন্ত্র ভোগ করছেন, তারা তা আরও পেতে চান। এটা প্রশংসনীয়। তবে এ দাবির বিপরীত দিকটাও তাদের ভেবে দেখা দরকার। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, আমি আশা করি তারা অন্তত এ কথাটুকু মনে রাখবেন যে, আওয়ামী লীগ তাদের মতামত প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্রের পথযাত্রা পুনরুজ্জীবিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বারবার কশাঘাতের শিকার হয়েছে। অবৈধ দখলদাররা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। দেশ শুধু স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির নেতৃত্বে উন্নত হতে পারে। কিন্তু ২১ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধ্বংস করেছে। একটি শিশু বিকৃত ইতিহাস থেকে কিছুই শিখতে পারে না। কিন্তু এ দেশে এটাই হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের সাফল্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অধিকতর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে গণযোগাযোগ খাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ দমন এবং সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের দুষ্টচক্র নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সরকার সমালোচনায় ভীত নয়। গঠনমূলক সমালোচনা শোধরাতে সহায়তা করে। তবে মিডিয়ার এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে অপশক্তির হাত শক্তিশালী হয়।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন তথ্যসচিব মর্তুজা আহমেদ।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘পূর্ণ গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য’ শীর্ষক উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন হওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা উচিত।
ওই গোলটেবিলের আলোচনায় বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, আইনজীবী শাহদীন মালিক, বদিউল আলম মজুমদার, আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ। বাসস।
বাংলাদেশ সময়: ৬:২৯:৫৩ ৩০৪ বার পঠিত