আমি হবো সকালবেলার পাখি” এই প্রতিজ্ঞা জড়িয়ে যায় নিজের অজান্তে ভালোলাগায়। খানিক বুঝে উঠার সাথে পণ করি বিদ্রোহী হবার। কী দুর্বার ভালোলাগায় মুখস্ত করে ফেলি কয়েক পাতা বিস্তৃত কবিতাটি। শুধু কী মুখস্ত করেই ক্ষ্যান্ত, টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করার ইচ্ছা জাগে। উঠিয়াছি চির বিষ্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর মম ললাটে জ্বলে ….আমি ভগবান বুকে এঁকে দেই পদচিহ্ন। কি সব শব্দ কোথায় যেন টেনে নিয়ে যায় কুল পাইনা অচেনা পৃথিবীর দ্বার খুলে দেয় মন জগতে।মনের আবেশ ঘন ভালোলাগায় বাজে চৈতালী চাঁদনী রাতে বেনুকার সুর, অভিমানে বসে থাকি তেপান্তরের মাঠে একা। মধু তৃষা নিয়ে কাঁদে শূন্য হিয়া ..মিলনের আকুলতায় সকলে জানে আমি তোমার প্রিয়া। কত যে অলঙ্করনে সাজাই নিজেকে তবু যেন পূরন হয় না সাজ। খোপায় তারার ফুল গুজে না দেওয়ায়। রঙধনুর রঙে আলতা না পরায়, জোছনার সাথে চন্দন মেখে গায়ে না মাখায়। বিজলী জরীন ফিতায় চুল না বাঁধায়।তবু সইকে বলি ভালো করে বিনদ বেনী বাঁধিয়া দে’ হংস মিথুন হয়ে থাকব বলে। গভীর অনুরাগে বলি, আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমাকে দিব না ভুলিতে। মধুর বাঁশরী বাজে বুকের মাঝে এক অগ্নিময় পুরুষের জন্য। কী অসম্ভব প্রাণ শক্তি দারিদ্রতা, জটিলতা জীবনের, সামাজিক টানাপুড়নের লৌহ শিকল ভেঙ্গে নিজের মতন সাজিয়ে নেয়ার চেষ্টা তেজী আরবী ঘোড়া যেন। পাগলা ঝরার ঝরা জল, উচ্ছোল ঝর্ণাধারা,বিধাতার মতন র্নিভিক। গভীর মমতায় জরিয়ে নেয়া পৃথিবীর অবাক করা ঘটনা গভীর মায়া ভরা টানা দুচোখের মাঝে। বাবরী দুলানো ঝাকরা চুলের উচ্ছেল প্রাণ ভরপুর মানুষটির উত্থান আর পতনের ঘনঘটার জীবন বড় বেশী কষ্ট দেয়। চাঁদেরে কে চাঁয় জোছনা সবাই যাচে,কতটা অন্তর নিহিত যন্ত্রনায় ধরা পরে বুঝি, যখন জানি শুধু চা আর পান দিয়ে হিজ মাস্টার ভয়েজ, ঘরের মধ্যে আটকে রাখে টগবগে ভরা সিন্ধু কে। উজার করে জোয়ার বয়ে যায় গানের এক বসায় তিত্রিসটির মতন গান তিনি লিখে ফেলেন। দারিদ্রতা বড় নিষ্টুর। আজ তাকে মাথায় তুলে রাখার চেষ্টা আর সেদিন তার বুকে যে ব্যথা বেজে ছিল অনুভবের জন্য কে ছিল তেমন করে পাশে। অমূল্য সে মেধার যন্ত্রনার জটিল জীবন সহজ না করে জটিল করা হয়েছে নানান ভাবে। যেদিন আমি হারিয়ে যাবো বুঝবে সেদিন বুঝবে অস্তপারের ছায়ার মাঝে আমার ছবি খুঁজবে। হারিয়ে যাবার আগে তার মাথায় কতশত কথা বিচরণ করেছে। রুটির দোকানে কাজ করতে হয়েছে, রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে হয়েছে, পত্রিকা সম্পাদনা তেমনি নানবিধ কাজে জড়িয়ে কত ভাবনা হয়ত হারিয়ে গেছে। আর যা লেখা হয়েছে তার কত হয়তো পৌঁছেনি আমাদের কাছে। আমার কাছে একখানা গানের বই আছে যে বইয়ের হাজার খানা গান আছে যার বেশীর ভাগ গান আমি শুনিনি সুরে। স্কুল পালানো ছেলে ভয়ানক পারর্দশি বিভিন্ন ভাষায় সম্যক জ্ঞান বিভিন্ন বিষয়ে। বিধাতার স্বহাতে তৈরী বহু যত্নের এক অমিত শক্তি যেন। নয়তো এমন হয়কি? লাথী মেরে ভেঙ্গে আগুন জ্বেলে নতুন করার ইচ্ছা যার মনে, আকাশে হেলান দেয়া পাহাড়ের ঝর্ণা, ঘরে যার মন টিকে না প্রেমিক কিন্তু বাঁধন মানতে ইচ্ছা করে না। ত্যাজস্বী এক ভরপুর যোগী, সাধক ক্ষয়ে ক্ষয়ে ম্লান হয়ে যায় ভিতরে ভিতরে বুলবুলি নিরব হয়ে যায় গানের পাখি। মা বাবা হারা দুঃখু মিয়ার জীবন শুরু থেকে শেষ দুঃখের তরনী বেয়ে যায়। সে যতই বলুক, এত জল ও কাজল চোখে পাষানি আনল বলো কে তার জীবন গল্প আমার চোখ জলে ভাসায়। ফুলের জলসায় নিরব কেন কবি। চুয়াত্তর সনে ঢাকায় কবির ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। অভিভাবকরা ঢুকতে গিয়েও প্রচণ্ড ভীড়ের জন্য সময় স্বল্পতার কারণে সিদ্ধান্ত বদলে নিলেন। যাওয়া হলো না। ফিরে এলাম ঢাকা থেকে আর দেখার সুযোগ হলো না। খানিক সে দেখায় কী আর এমন বদলে দিত শুধুইতার জীবন্ত র্নিবাক দৃষ্টির সম্মুখিন হওয়া ছাড়া। তার মুখ থেকে বা কলম থেকে আর একটি বাক্যও তৈরী হতো না আমার জন্য। তবু মনে পরে যায়। আমাদের শহরের দিপালী মাসিমা নজরুলগীতি করা তার মেয়েকে নিয়ে কবি ভবনে গিয়ে ছিলেন। কবির পায়ের কাছে বসে রত্না দিদি অনেক গুলো গান করেছিলেন। সে গান শুনার সময় কবির চোখের চাহুনী নাকি অনুভুতি ব্যক্ত করছিল। মাসিমার মুখের সে বর্ণনা আমার হৃদয়ে এক ধরণের আকুলতা তৈরী করে দেয় সেই গল্প শোনার শিহরণ আজো অনুভব করি নিজের চোখে দেখার মতন। কেন এই নির্বাক সময় কাটিয়ে গেলে কবি? কী ভাবতে এতগুলো নির্বাক কাটিয়া যাওয়া মুহু র্তে খুব জানতে ইচ্ছে করে। সব কথা কি বলে ফেলেছিলে আগে গানে, কবিতায়, গল্পে? আমার ইচ্ছে মতন আমি তোমায় ভাবি হৃদয়ে ধারন করি আর কষ্ট পাই, চোখের জলে ভাসি আপন মনে।
বাংলাদেশ সময়: ৫:৫৪:৩২ ৭০৮ বার পঠিত